উইন্ডোজ সার্ভার কি? এটি সাধারণ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম থেকে কতোটা আলাদা?

আপনি হয়তো বহুদিন যাবত উইন্ডোজ কম্পিউটার ইউজ করেন, কিন্তু জেনে অবাক হবেন আপনি কেবল উইন্ডোজের কনজিউমার ভার্সন ইউজ করে এসেছেন, আরেকটি উইন্ডোজ ভার্সন রয়েছে যেটা বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ ব্যাপারে ইউজ করার জন্য — উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন! তো বুঝতেই পারছেন, উইন্ডোজের ডেক্সটপ ও সার্ভার ভার্সন উভয়ই রয়েছে। এক দর্শনে দেখতে গেলে উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ সার্ভার ২০১৬ দেখতে একই রকমের; কিন্তু এদের এরা আলাদা কাজের জন্য তৈরি করা।

উইন্ডোজ ১০ যেখানে সাধারণ অ্যাপলিকেশন, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, বা ফটোশপের মতো প্রোগ্রাম গুলোকে রান করানোর জন্য ডিজাইন করা সেখানে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১৬ অনেক কম্পিউটার, ফাইল, এবং সার্ভিসেস ম্যানেজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

তো চলুন, উইন্ডোজ সার্ভার এবং সাধারণ উইন্ডোজের মধ্যের পার্থক্য গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই আর্টিকেলে বিশেষ করে উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন সম্পর্কে বেসিক গুলো জানার চেষ্টা করবো, খুঁজে বের করবো এটা কিভাবে আলাদা এবং কোন টাইপের ইউজারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা।


উইন্ডোজ সার্ভার কি?

এখানে অনেকেই রয়েছে যারা পূর্বে কখনো উইন্ডোজ সার্ভারের নামই শোনেনি, তাদের জন্য চলুন প্রথমে এক্সপ্লেইন করা যাক উইন্ডোজ সার্ভার কি? — সাধারণ মানুষের ভাষায় বলতে গেলে উইন্ডোজ সার্ভার হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেম যেটা বিশেষ করে সার্ভার কম্পিউটার ম্যানেজ করার জন্য ইউজ করা হয়ে থাকে। এরমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উইন্ডোজ সার্ভার এডিশনকে বিজনেস সেটিং এ ইউজ করা হয়।

উইন্ডোজ সার্ভার নাম হলেও এটি দেখতে কিন্তু সাধারণ উইন্ডোজ ভার্সনের মতোই। তৎকালীন সময়ের উইন্ডোজ এর কনজিউমার এর উপরে ভিত্তি করেই উইন্ডোজ সার্ভার ভার্সনের ডিজাইন করা হয়। যেমন- উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৩ আসলে উইন্ডোজ এক্সপি এর সার্ভার ভার্সন ছিল। আর বর্তমানের উইন্ডোজ সার্ভার ২০১৬ এবং ২০১৯ হচ্ছে উইন্ডোজ ১০ এর সার্ভার ভার্সন!

সাধারণ উইন্ডোজ এবং উইন্ডোজ এর সার্ভার ভার্সন সেইম কোডের উপরে তৈরি করা ফলে এরা দুজনেই অনেক একই ফাংশন পারফর্ম করে। এই জন্য নর্মাল উইন্ডোজ আর উইন্ডোজ সার্ভারের স্টার্ট মেন্যু, ট্যাস্কবার, আইকন ইত্যাদি দেখতে সিমিলার। সাথে এই দুই ভার্সনের উইন্ডোজেই একই প্রোগ্রাম যেমন- ব্রাউজার, ফটো এডিটর ইত্যাদি ইন্সটল করে ইউজ করা যায়।

তবে এই দুই ভার্সনের উইন্ডোজে মিলের থেকে অমিল গুলোই বেশি, চলুন এবার সেগুলো নিয়েই আলোচনা করা যাক…

উইন্ডোজ সার্ভারে এন্টারপ্রাইজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার রয়েছে

আপনি উইন্ডোজ সার্ভার বুট করার পরেই যদি আপনার GUI এনাবল করা থাকে সেক্ষেত্রে বুটের সময় সার্ভার ম্যানেজার প্রোগ্রাম লঞ্চ হয়। বলতে পারেন দুইটি অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে এটা প্রথম বড় পার্থক্য। এখানে সার্ভার স্পেসিফিক অনেক ফিচার অ্যাড করা যেতে পারে, যেমন; Windows Deployment services, DHCP services, এবং Active Directory Domain Services. — এই ফিচার গুলো সাহায্যে অপারেটিং সিস্টেমকে আলাদা মেশিন থেকে রিমোটলি চালানোর জন্য সহায়ক করে তোলে। ওয়েব সার্ভার সেটআপ, ক্লায়েন্ট মেশিনের জন্য স্ট্যাটিক আইপি সেটআপ, ডোমেইন সেটআপ, ডোমেইন ইউজার সেটআপ এই জিনিষ গুলো উইন্ডোজ ১০ এ ডিফল্টভাবে থাকে না। তবে তৃতীয়পক্ষ সফটওয়্যার ইউজ করে উইন্ডোজ ১০ এ ও এগুলোকে এনাবল করা যেতে পারে।

সাথে উইন্ডোজ সার্ভার এডিশনে SMB Direct ফিচার মজুদ রয়েছে, যেটা দ্রুততর ফাইল শেয়ারিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই টাইপের সিমিলার ফিচার কেবল উইন্ডোজ ১০ এর প্রো ভার্সনে পাওয়া যেতে পারে যেটা বিশেষ করে ওয়ার্ক ষ্টেশনের জন্য ইউজ করা হয়।

তাছাড়া উইন্ডোজ সার্ভার আরো অনেক কম্পিউটারের সাথে মিলিত হয়ে কাজ করতে পারে। এরমানে একেক কম্পিউটার একেক সার্ভার রোল এবং ফাংশন হ্যান্ডেল করে একত্রে কাজ করতে পারে।

উইন্ডোজ সার্ভার আরো বেটার হার্ডওয়্যার সাপোর্ট করে

উইন্ডোজ ১০ এর তুলনায় উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন আরো বেটার হার্ডওয়ার্ড সাপোর্ট করার ক্ষমতা রাখে। যেখানে উইন্ডোজ ১০ সর্বচ্চ ২ টেরাবাইট সাইজ পর্যন্ত র‍্যাম সাপোর্ট করতে পারে সেখানে উইন্ডোজ সার্ভার ২৪ টেরাবাইট পর্যন্ত র‍্যাম অ্যালাউ করে। ডেক্সটপ ইউজারদের এতো হাই ক্যাপাসিটি র‍্যামের দরকার পরে না, কিন্তু সার্ভারের হিসেব আলাদা, সেখানে অনেক ইউজার থাকে এবং অনেক অ্যাপ্লিকেশন রান করাতে হতে পারে।

শুধু মারাত্মক ক্যাপাসিটির র‍্যাম সাপোর্টই নয়, উইন্ডোজ সার্ভার ৬৪টি সিপিইউ সকেট সাপোর্ট করতে পারে, এর মানে একসাথে এটি ৬৪টি পর্যন্ত সিপিইউ চালাতে পারে। যেখানে উইন্ডোজ ১০ হোম এডিশন ১টি ফিজিক্যাল সিপিইউ এবং উইন্ডোজ ১০ প্রো দুইটি ফিজিক্যাল সিপিইউ সাপোর্ট করতে পারে। সাথে উইন্ডোজ ১০ এর ৩২-বিট ভার্সন কেবল ৩২ সিপিইউ কোর সাপোর্ট করে ও ৬৪-বিট ভার্সন ২৫৬ কোর পর্যন্ত সিপিইউ সাপোর্ট করে — কিন্তু উইন্ডোজ সার্ভার ভার্সনে কোন কোর লিমিট নেই।

এতোবেশি কনফিগারেশন শুনতেও অনেকটা হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু সার্ভার কম্পিউটারে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সার্ভারে একসাথে শতশত ইউজার থাকতে পারে, একটি কোম্পানির সার্ভার তাদের হাজারো কর্মচারী একসাথে আক্সেস করতে পারে, সুতরাং সার্ভারে হাই এন্ড হার্ডওয়্যার থাকা অনেক যুক্তিযোগ্য!

উইন্ডোজ সার্ভারে আলাদা ফিচার গুলো থাকে না

উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ ইউজের জন্য তৈরি করা, এতে কনজিউমার লেভেল ফিচার গুলো যেমন- করটানা, মাইক্রোসফট স্টোর, মাইক্রোসফট এজ, টাইমলাইন — ইত্যাদি ইনক্লুড করা থাকে না। এতে আগে থেকেই উইন্ডোজ ১০ এর মতো অনেক অ্যাপ ব্যান্ডেল আঁকারে ইন্সটল করা থাকে না।

উইন্ডোজ সার্ভার বিশেষ করে প্রো ইউজারদের জন্য ডিজাইন করা, এতে পাওয়ার ইউজার ফিচার যেমন- কম্যান্ড প্রম্পট, এবং আলাদা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টুল গুলো থাকে। উইন্ডোজ সার্ভারে সাধারণ মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন-ইন করা যায় না, বরং লোকাল অ্যাকাউন্ট বা ডোমেইন অ্যাকাউন্ট ইউজ করে সাইন-ইন করা হয়।

উইন্ডোজ সার্ভার আরো বেশি দামী

আপনার কাছে যদি উইন্ডোজ ৭, ৮, ১০ এর কী থাকে সেক্ষেত্রে ফ্রিতে উইন্ডোজ ১০ ইন্সটল করা যেতে পারে। তারপরে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা অনেক কমদামে উইন্ডোজ ১০ কী বিক্রি করে থাকে। অপরদিকে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১৬ বা ২০১৯ এর কী কেনা এতোটা সহজ ব্যাপার নয় (যেহেতু উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন বিশেষ করে বিজনেসের জন্য তৈরি করা)।

হ্যাঁ, উইন্ডোজ সার্ভার এডিশন এর লাইসেন্স অনেকবেশি দামী। আপনি কেমন বিজনেস রান করেন আপনার কতোগুলো সার্ভার কম্পিউটার রয়েছে ইত্যাদি ফ্যাক্টরের উপরে নির্ভর করে উইন্ডোজ সার্ভার লাইসেন্স এর দাম $500-$6200 পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। উইন্ডোজ সার্ভার বিশেষ করে বিজনেসের জন্যই তৈরি করা হয়েছে এবং সেই অনুসারে এর দাম সেট করা হয়েছে।

আপনি যদি পার্সোনাল ইউজের জন্য উইন্ডোজ ইউজ করেন সেক্ষেত্রে বেস্ট চয়েজ হচ্ছে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করা। উইন্ডোজ ১০ এখনো ফ্রিতে ইউজ করার সকল টিপস এই আর্টিকেল থেকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি আলাদা আরো কম্পিউটার ম্যানেজ, ওয়েব সার্ভার, ফাইল ট্র্যান্সফার, হোম ও ওয়ার্ক পিসি গুলো লিংক করা ইত্যাদি কাজের জন্য উইন্ডোজ ইউজ করেন সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ সার্ভার আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে।


আপনি যদি ফ্রেশ ইন্সটল করা উইন্ডোজ সার্ভার এবং উইন্ডোজ ১০ বুট করেন সেক্ষেত্রে প্রথম নজরে পার্থক্য করতে ভিমরী খেয়ে যেতে পারেন। দুইটোরই একই ডেক্সটপ, একই স্টার্ট বাটন, একই ট্যাস্কবার, এমনকি একই ক্রোম ব্রাউজার দুইটোতেই ইন্সটল করে চালানো যাবে। — কিন্তু এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে এখন আপনি নিশ্চয় সাধারণ উইন্ডোজ এবং উইন্ডোজ সার্ভারের মধ্যের পার্থক্য গুলো খুঁজে পেয়েছেন। সত্যি বলতে আপনি যদি সাধারণ ইউজার হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ সার্ভার নিয়ে আপনার কোন যায়ই আসবে না। তবে জেনে রাখার জন্য এটি একটি ইন্টারেস্টিং টপিক, তাই বেসিক ব্যাপার গুলো বিস্তারিত ভাবে শেয়ার করলাম!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories