অনেকেই রয়েছেন যাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার মনিটরের সামনে পরে থাকতে হয়, অনেকের কাছে এটা পেশা আবার কারো কাছে এটা নেশা! কিন্তু একটানা বেশিক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের জন্য মোটেও আরামদায়ক আর ভালো ব্যাপার নয়। সৌভাগ্যবশত অনেক ভালো উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে মনিটর থেকে চোখের ক্ষতি হওয়া কমানো যেতে পারে। সামান্য কষ্ট করে কিছু অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে আপনার অমুল্য চোখকে ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন!
চোখের ব্যাম
ব্যাপারটা শুনতে কিছুটা আজব লাগলেও, হ্যাঁ, চোখের ও ব্যামের প্রয়োজন রয়েছে। কোন জিনিষের দিকে এক নাগারে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বালা করে এবং চোখের ক্ষতি হতে পারে। আমি এই প্যারাগ্রাফে খুব বেশি সায়েন্স বুঝানোর চেষ্টা করবো না, কিন্তু সিম্পল একটি অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে মনিটরের সামনে বসে থাকা থেকে যে ক্ষতি হতে পারে, সেটা এড়ানো যেতে পারে।
২০-২০-২০ নামে একটি অভ্যাস রয়েছে, এর মানে হচ্ছে প্রত্যেক ২০ মিনিট পরে মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরে অবস্থিত কোন জিনিসের দিকে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য নজর সরাতে হবে। এতে মনিটরের দিকে এক নাগারে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে যে ব্যাথা বা খচখচ অনুভূতি, সেটা দূর হয়ে যাবে।
যদি আপনার সিট থেকে ২০ ফুট দূরে কিছুই না থাকে তাকানোর মতো, তাহলে বেস্ট হবে উঠে কিছুটা সময় এদিক ঐদিক হেঁটে আসুন তারপরে আবার কম্পিউটারের সামনে বসতে পারেন। একটানা শুধু মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা নয়, বরং একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকাও শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর! এমনকি একটানা বেশি বসে থাকলে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
চোখে চশমা ব্যবহার করুন
মনিটরের নীল আলো থেকে বাঁচতে চোখে চশমা ব্যবহার করতে পারেন, এতে নীল আলো চোখের খুব ক্ষতি করতে পারবে না। আর হ্যাঁ, মনিটরের আলোর লেভেল কমিয়ে চোখের সহনীয় লেভেলে সেট করে রাখা ভালো। অত্যন্ত ব্রাইট মনিটর থেকে চোখ ব্যাথা হয়ে যেতে পারে। উইন্ডোজ ১০ এর নাইট লাইট ফিচার ইউজ করে মনিটরের আলো চোখের জন্য সহনীয় করা যেতে পারে, তাছাড়া f.lux নামক একটি তৃতীয়পক্ষ প্রোগ্রাম এই সেইম কাজ করতে পারে!
অনেক মনিটরে ডিফল্টভাবে লো ব্লু মুড ফিচার থাকে, যার ফলে মনিটরের দিকে তাকানো অনেক সহজ হয়ে যায় চোখের দিকে। যেমন- ফিলিপ্স এর মনিটরে লো ব্লু মুড থাকে, বেনকিউ এর মনিটরে লো ব্লু লাইট মুড থাকে, এইচপি এর মনিটরে ব্লু লাইট ফিল্টার মুড থাকে।
আর যদি আপনি আগে থেকেই চোখে গ্লাস ইউজ করা টাইপের হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে কেনই মনিটর থেকে চোখ রক্ষার জন্যও একে ব্যাবহার করবেন না? মনিটরের ব্লু লাইট ফিল্টার ইউজ করার পাশাপাশি চোখে গ্লাস ইউজ করা একটি ভালো আইডিয়া। ব্লু লাইট থেকে চোখ কে বাঁচানোর জন্য অনেক লেন্স পাওয়া যায়, যেগুলো চশমায় ইউজ করে চোখকে নিরাপদ করতে পারেন!
সঠিকভাবে মনিটর সেটআপ
মোটামুটি এতটা দূরত্বে আপনার মনিটরটি সেট করুন, যাতে সেটা আপনার চোখ থেকে ৪০-৭৫ সেন্টিমিটার দূরে অবস্থিত হয়। তবে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করবেন, আপনি মনিটরের লেখা গুলো যাতে পরিষ্কার দেখতে পান, না হলে চোখের উপর বেশি চাপ পরতে শুরু করবে।
পারলে একটি এন্টিগ্লেয়ার মনিটর কেনার চেষ্টা করবেন, এতে লাইট সোর্স থেকে লাইট রিফ্লেক্ট করে মনিটর থেকে রিফ্লেকটেড লাইট চোখে এসে লাগবে না। মনিটর গ্লেয়ার চোখের জন্য ক্ষতির ব্যাপার, কেননা এতে মনিটরের লেখা গুলো পড়তে অসুবিধার সৃষ্টি করে। যদি এন্টিগ্লেয়ার মনিটর না থাকে সেক্ষেত্রে রুমের লাইট সোর্সের লোকেশন পরিবর্তন করেও রিফ্লেকশন কমানো যেতে পারে।
নিয়মিত চোখ ঝাপকানো কিন্তু ভালো অভ্যাস
এটা বলার চেয়ে করা একটু কঠিন, টেকনিক্যাল ভাবে অনেক সহজ কাজ বটে, কিন্তু আপনার পছন্দের টিভি সিরিজ চলছে আর সেক্ষেত্রে নিশ্চয় এক সেকেন্ড ও মিস করতে চাইবেন না, তাই না? কিন্তু এটা আপনাকে করতেই হবে, আপনার মূল্যবান চোখ ভালো রাখার খ্যাতিরে!
নিয়মিত চোখ ঝাঁপকালে চোখ ভেজা থাকতে পারে, এতে চোখের ক্ষতি কমে যায়। এক নাগারে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ শুকিয়ে যায়, যেটা অনেকটা ক্ষতির ব্যাপার!
অনেক কাছ থেকে টিভি দেখার ফলে চোখ কানা হয়েছে এমন দুই একটা ছোট বেলার বন্ধু ও রয়েছে আমার, তো সঠিকভাবে কেয়ার না করলে আপনি ও ফেস করতে পারেন এমন কোন চোখের সমস্যা। কম্পিউটিং যাদের লাইফ, তাদের মনিটরের সামনে বসে থাকতে হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু উপরের সাধারণ ট্রিক্স গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে চোখের ক্ষতি কমানো যেতে পারে।
যাইহোক, আপনার কি মনিটরের সামনে বেশি বসে থাকার ফলে চোখের সমস্যা হয়েছিল।কখনো? কিভাবে এই সমস্যা থেকে বের হতে পেড়েছিলেন? আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাবেন!
Image Credit: Shutterstock
No Comment! Be the first one.