সার্ভারলেস কম্পিউটিং কি? আপনার যেগুলো জানা প্রয়োজনীয়!

সার্ভারলেস কম্পিউটিং মানে হচ্ছে… ওয়েট!… আমি “সার্ভারলেস” বলেছি? কম্পিউটিং আবার সার্ভার ছাড়া হয় নাকি? সার্ভারলেস বলে কি সত্যিই কিছু রয়েছে? ওয়েল, টেকনিক্যাল ভাবে ব্যাপারটা বুঝাতে গেলে অনেক অসুবিধা হয়ে যাবে বুঝতে! আর টেকনিক্যালভাবে আলোচনা করার জন্য ওয়্যারবিডি ফেমাস নয়, বরং সহজ ভাষায় বুঝানোর জন্য ফেমাস! যাইহোক, বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে এবার আর্টিকেল প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা যাক…

প্রথমেই বলে রাখতে চাই, সার্ভারলেস বলে আসলে কোন জিনিষ নেই, তবে এটাকে এক টাইপের মার্কেটিং টার্ম বলতে পারেন। কিন্তু এর নাম “সার্ভারলেস”ই কেন হলো সেটা নিচের প্যারাগ্রাফ থেকে একটু পরেই জানতে পারবেন। তো চলুন, আমজনতার ভাষায় সার্ভারলেস কম্পিউটিং ব্যাখ্যা করা যাক!


সার্ভারলেস কম্পিউটিং কি?

দেখুন, কম্পিউটিং বলতেই সেখানে কম্পিউটারের অস্তিত্ব থাকবে, সেটা আপনার সামনেই হোক আর ব্যাকগ্রাউন্ডে। আচ্ছা ব্যাপারটা একেবারে শুরু থেকে শুরু করা যাক… ধরুন, আপনি একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করতে চান। সেক্ষেত্রে টেকনিক্যালি আপনাকে কি করতে হবে? ওয়েল, আপনার একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন পরবে, কোন ওয়েবসাইট রান করতে অবশ্যই কম্পিউটিং রিসোর্স প্রয়োজনীয় হয়। এখন খালি কম্পিউটার হলেই তো হবে না, তাই না? প্রথমে ডিসেন্ট অ্যামাউন্ট হার্ডওয়্যার প্রয়োজনীয় হবে তারপরে কম্পিউটারটিতে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে হবে, তারপরে ওয়েব সার্ভার সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে। তারপরে আপনার ওয়েবসাইটটি হোস্ট করে রান করতে পারবেন।

আর হ্যাঁ; নেটওয়ার্কিং, ফায়ারওয়াল ইত্যাদি কনফিগার করার ব্যাপার গুলো তো রয়েছেই। এখন আপনি চাইলে নিচের পিসিতেও ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন (কেন নিজের পিসিতে ওয়েবসাইট হোস্ট করা এক ভয়ানক আইডিয়া?) অথবা হোস্টিং কোম্পানি থেকে সার্ভার কম্পিউটার ভাঁড়া নিয়ে ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন।

তো ওয়েবসাইট হোস্ট করতে কি কি লাগছে? অনেক টেকনিক্যাল নলেজ সাথে কম্পিউটার ম্যানেজ করার ঝামেলা, রাইট? কিন্তু এই ঝামেলা গুলো না করে জাস্ট ওয়েবসাইট হোস্ট করা যায় না? মানে সার্ভার কম্পিউটার ম্যানেজ না করে বা কোন সফটওয়্যার ইন্সটল না করে? — হ্যাঁ, যায়! আর এখানেই সার্ভারলেস কম্পিউটিং টার্মটি চলে আসে!

সার্ভারলেস মানে সেখানে কোন সার্ভারই যে নেই, এমনটা নয়। বরং সার্ভারলেস মানে হচ্ছে ইউজারকে সার্ভার ম্যানেজ করতে হবে না। আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আপনার ওয়েবসাইট রান করতে বা আপনার অ্যাপ হোস্ট করতে কতো র‍্যাম লাগবে, কতো কোর সিপিইউ লাগবে, কতো ব্যান্ডউইথ লাগবে — এখানে সবকিছুই ম্যানেজড হবে। আপনি জাস্ট ওয়েবসাইট হোস্ট করবেন, আপনাকে কম্পিউটার ম্যানেজ করতে হবে না!

এখন ব্যাকএন্ডে অবশ্যই সার্ভার রয়েছে, আর আপনার সাইট ক্লাউডে হোস্ট করা থাকবে। এখন ক্লাউডে হোস্ট করা রয়েছে বলেই যে সার্ভারলেস টার্মটি উপযুক্ত প্রমাণিত হবে, এমনটা নয় কিন্তু! ক্লাউড মানেই তো সার্ভারের এক খামার যেটা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রয়েছে। এতে মোটেও সার্ভারলেস হয়ে যায় না সম্পূর্ণ ব্যাপারটি। কিন্তু বলতে পারেন সার্ভারলেসের নামে আপনাকে যে সার্ভিসটি প্রদান করা হচ্ছে সেটা থেকে সার্ভারলেস এক্সপেরিয়েন্স পাবেন।

সার্ভারলেস কম্পিউটিং এর সুবিধা

সার্ভারলেস টার্মটি বিশেষ করে বিজনেস পলিসির জন্যই ইউজ করা হয়। এই টার্মটি দ্বারা বিগেনার টাইপ ইউজারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়, ইউজাদের ম্যানুয়াল কোন কনফিগ করতে হবে না কোন অ্যাপ নিজে থেকে ইন্সটল করতে হবে না, জাস্ট আপনার ওয়েবসাইট হোস্ট করুন, বাকিটা মানে ব্যাকএন্ড সিস্টেম ক্লাউড কোম্পানি ম্যানেড করবে।

আচ্ছা মনে করুন, গুগল ড্রাইভের মতো কোন ফাইল স্টোরেজ সার্ভিস এখনো চালু হয়নি। তাহলে ক্লাউডে ফাইল স্টোর করার জন্য আপনাকে কি করতে হতো? হ্যাঁ, আপনাকে ফুল সার্ভার ভাঁড়া নিতে হতো তারপরে নিজস্ব ফাইল ম্যানেজার সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হতো, নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করতে হতো, তারপরেই আপনি ক্লাউড সার্ভারে ফাইল হোস্ট করতে পারতেন! কিন্তু গুগল ড্রাইভ ইউজ করতে আপনাকে কি করতে হচ্ছে? কিছুই না! জাস্ট সাইনআপ করেই ফাইল আপলোড শুরু করতে পারছেন, এর পেছনের কনফিগারেশন, সার্ভার, ডিস্ক, নেটওয়ার্ক — সবকিছু গুগল ম্যানেজ করছে!

সার্ভারলেস কম্পিউটারে আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি সার্ভার থেকে ঠিক যতটুকু রিসোর্স ইউজ করছেন তার জন্যই পে করবেন, আপনাকে সম্পূর্ণ সার্ভারে বিল পে করতে হবে না। এখানে মাসিক কোন ফিক্সড সার্ভার প্ল্যান কিনে চার্জ দিতে হবে না। আপনি দৈনিক কতো সময় ইউজ করছেন তা হিসেব করে বিল আসবে।

এখানে কিন্তু সার্ভার প্রভাইডারদের ও সুবিধা রয়েছে। আপনার সাইটে কখন কতোটুকু রিসোর্স লাগবে সে অনুসারে সার্ভার সফটওয়্যার সে পরিমাণে রিসোর্স আপনার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সেট করে দেবে। যখন আপনার সাইটে বেশি ট্র্যাফিক আসছে না, তখন জাস্ট আপনার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য রিসোর্স কমিয়ে দেওয়া হবে। আর ঐ রিসোর্স আলাদা কোন ক্লায়েন্টের অ্যাপ্লিকেশন ফাস্ট করবে! বুঝলেন তো ব্যাপারটা?

কিভাবে সার্ভারলেস কম্পিউটিং ইউজ করবেন?

বর্তমানে অনেক অনেক ক্লাউড কোম্পানি সার্ভারলেস কম্পিউটিং সলিউশন প্রদান করে থাকে। আপনাকে একটি কনসোল আক্সেস দেওয়া হয় আর আপনি সেটা দিয়ে আপনার অ্যাপটি ম্যানেজ করতে পারেন। বাকিটা সার্ভারলেস সার্ভিস থেকে হ্যান্ডেল করা হয়।

অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস এর ল্যাম্বডা নামক একটি সার্ভিস রয়েছে, যেটা মূলত একটি সার্ভারলেস কম্পিউটিং সার্ভিস! আপনাকে সার্ভারের ম্যানেজ করা নিয়ে বা সার্ভার চার্জ দিতে হবে না, যতোক্ষণ আপনার কোডটি রান হবে ঠিক সেই সময়ের বিল প্রদান করতে হবে, বাকিটা ব্যাকএন্ড সার্ভিস গুলো অ্যামাজন নিজে হ্যান্ডেল করবে।

শুধু অ্যামাজনই নয়, মাইক্রোসফট অ্যাজার ও একই টাইপের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। বর্তমানে তো সার্ভারলেস ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ও মার্কেটে চলে এসেছে! আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটটির স্ট্যাটিক ভার্সন আপলোড করা থাকবে। আপনাকে ওয়েব সার্ভার, পিএইচপি ভার্সন, ডাটাবেজ কোন কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হবে না। ফ্রোন্ট এন্ড থেকে যে সাইটটি সবাই দেখতে পাবে সেটা কেবলই এইচটিএমএল স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট, আর ব্যাকএন্ড এ ঠিক তখনই ওয়ার্ডপ্রেস রান হবে যখন দরকার পরবে! “সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো তো?” — সমস্যা নেই, আপনি Shifter প্ল্যাটফর্মটি ট্রায় করে দেখুন!


তো সম্পূর্ণ ব্যাপারটি পড়ে কি বুঝলেন? এর মান সার্ভারলেস হলেও, আসলে কিন্তু সম্পূর্ণ সিস্টেমটি তেমন সার্ভারলেস নয়! তবে টার্মটি একদিক থেকে ভালোই, যদি আপনি সার্ভার ম্যানেজ করা নিয়ে কোন ঝামেলা না করতে চান। তবে ফুল সার্ভার ইউজ করার আরেক মজা রয়েছে, সেখানে যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীনতা রয়েছে। বাট তারপরেও, বলতেই হবে “সার্ভারলেস কম্পিউটিং ইস গুড!”

তো এই ব্যাপারে আপনার কি মতামত? মনের মধ্যে নতুন কোন প্রশ্ন ট্রিগার করছে? আমাদের বিস্তারিত নিচে কমেন্ট করে জানান! আর হ্যাঁ, ক্লাউড কম্পিউটিং আরো নিয়ে বিস্তারিত এখানে চেক করতে পারেন!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories