ক্লাউড কম্পিউটিং : এক বিস্তারিত আলোচনা! [আপডেটেড ২০১৯]

২০১৬ সালের শুরুর দিকে ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে একটি বেসিক আর্টিকেল লিখেছিলাম, যেটা এখানে চেক করতে পারবেন — কিন্তু তখন থেকে এখন পর্যন্ত অনেকটা সময় পরিবর্তন হয়েছে, তাই ভাবলাম নতুন করে আরো তথ্য যুক্ত করে আরেকটি ক্লাউড কম্পিউটিং পোস্ট করে ফেলা যাক!

ওয়েল, ক্লাউড কম্পিউটিং একদিক থেকে অত্যন্ত সাধারণ একটি টার্ম, আবার এর টেকনিক্যাল দিক ও রয়েছে। আমরা প্রত্যেকদিনই জেনে বা অজান্তেই ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাথে জড়িত রয়েছি, এর টাইপ বা সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে পরে আলোচনা করবো। পূর্বে জানতে টার্মটি দ্বারা বুঝানো হয়েছেটা কি?


ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

এক সময় মানুষ পার্সোনাল কম্পিউটারেরই প্রয়োজন বোধ করতো না, তৎকালীন মানুষের মতে কম্পিউটার কখনোই বাড়িতে ব্যবহার করার দরকার পরবে না, এরকমটা মানা হতো। কিন্তু আজ ইন্টারনেটের মারাত্মক উন্নতির ফলে ক্লাউড কম্পিউটিং নামক টপিকটির সাথে আমাদের পরিচত হতে হচ্ছে।

আচ্ছা, আপনি কম্পিউটিং বলতে কি বোঝেন? নিশ্চয় আপনার একটি কম্পিউটার রয়েছে, মানে একটি ফিজিক্যাল ডিভাইজ যেটার হার্ডওয়্যার আপনার টেবিলের উপরে অবস্থতি তারপরে সেটার সাহায্যে আপনি নানান টাইপের কম্পিউটিং টাস্ক সম্পূর্ণ করে থাকেন, রাইট? — কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হচ্ছে আপনার কম্পিউটারের ফিজিক্যাল মেশিনটি আপনার টেবিলে না থেকে দুনিয়ার আরেক প্রান্তে থাকতে পারে, আর সেটাকে আপনি ইন্টারনেট এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও কম্পিউটিং করতে পারবেন। এখানে “ক্লাউড” বলতে ইন্টারনেটকে নির্দেশ করা হয়েছে!

এখনো ব্যাপারটি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? আচ্ছা, চলুন আরো পরিষ্কার করার চেষ্টা করা যাক… আসলে ক্লাউড কম্পিউটিং এই টার্মটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকমের হতে পারে, একেবারে পানির মতো পরিষ্কার করার জন্য কিছু উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে!

ক্লাউড কম্পিউটিং এর উদাহরণ

আচ্ছা, আপনি গুগল সার্চ করেই হয়তো এই আর্টিকেল পর্যন্ত এসেছেন, বা প্রতিনিয়তই গুগল সার্চ করেন, রাইট? কিন্তু আপনি যখন গুগল সার্চ করেন সেক্ষেত্রে আপনার ফোন বা ডেক্সটপ কম্পিউটার সার্চ রেজাল্ট পেতে অনেক কমই ভূমিকা পালন করে, সমস্ত কাজ গুলো সম্পূর্ণ হয় গুগলের সার্ভার কম্পিউটারে! গুগলের এক সাথে লাখো কম্পিউটার রয়েছে যারা সমস্ত ডাটাবেজ থেকে রেজাল্ট খুঁজে বের করে তারপরে আপনার সামনে ডিসপ্লে করে — আসলে এভাবে আপনি ক্লাউড কম্পিউটিংই করছেন!

আচ্ছা, এবার বলুন — আপনি নিশ্চয় জিমেইল ব্যবহার করেন, রাইট? কিন্তু আপনার কাছে যখন কেউ কোন মেইল সেন্ড করে সেটা কি আপনার পিসিতে চলে আসে নাকি ব্রাউজার দিকে লগইন করে মেইল গুলো দেখতে হয়? আচ্ছা এই মেইল গুলো তো আপনার পিসিতে নেই, তাহলে কোথায় রয়েছে? হ্যাঁ, গুগলের সার্ভার কম্পিউটারে! আপনি যেগুলোকে আপনার পিসি থেকে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন, ইয়েস, এখানেও আপনি ক্লাউড কম্পিউটিংই করছেন!

এবার বলুন, আপনি যদি কম্পিউটারে কোন ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তৈরি করতে চান সেটা কিভাবে করতে পারবেন? সিম্পল, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে তারপরে ইচ্ছা মতো ডকুমেন্ট তৈরি, এডিট ইত্যাদি করা যাবে, তাই না? — কিন্তু গুগল ডকুমেন্ট সার্ভিস ইউজ করে আপনি ব্রাউজার ব্যবহার করেই যেকোনো ডকুমেন্ট তৈরি, এডিট, ভিউ করতে পারেন। বলুন তো আপনার পিসিতে সফটওয়্যার ইন্সটল না করেই এটা কিভাবে হচ্ছে? আপনি গুগল সার্ভারের সাহায্য নিয়ে এই কাজ করছেন!

আপনি ইউটিউব ভিডিও দেখেন, রাইট? আচ্ছা এই ভিডিও গুলো কি আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে সেভ রয়েছে? উত্তরটি হচ্ছে না, তাহলে কোথায় সেভড রয়েছে? আপনার এতে কোন যায় আসে? আসলে এই ভিডিও গুলো দুনিয়ার অনেক প্রান্তে অবস্থিত গুগলের কম্পিউটারে সেভড থাকে আপনি জাস্ট ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেগুলো আক্সেস করছেন। — হ্যাঁ, আপনি এখানেও ক্লাউড কম্পিউটিং ই করছেন!

ক্লাউড কম্পিউটিং কেন প্রয়োজনীয়?

এবার এক্কেবারে কাজের প্রশ্নটি করেছেন, ক্লাউড কম্পিউটিং এর কেন এতো গুরুত্ব রয়েছে? আচ্ছা মনে করুন আমি আপনাকে ফোনে একটি এসএমএস সেন্ড করেছি, যেটা সাধারণত আপনার মোবাইল ফোনে লোকালভাবে স্টোরড রয়েছে। ধরুন, আপনি মোবাইলটি বাসায় ফেলে আসলেন, এখন বলুন তো আপনি এসএমএসটি কিভাবে আক্সেস করবেন? আপনাকে বাসায় যেতে হবে এবং ফোনটি আনতে হবে, কেনোনা শুধু মাত্র এভাবেই ডাটাটি আক্সেস করা যেতে পারে।

কিন্তু আমি যদি আপনাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজটি সেন্ড করতাম, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ফোনটি বাসায় ফেলে আসলেও সমস্যা নেই। আপনি জাস্ট যে কারো ফোন থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করতেন আর চট করে ম্যাসেজটি পেয়ে যেতেন, রাইট? — কেনোনা ফেসবুকের মাধ্যমে কোন ম্যাসেজ সেন্ড করলে সেটা আপনার লোকাল ডিভাইজে নয় বরং ফেসবুক সার্ভারে স্টোরড থাকে, আর সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ইউজ করে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্ত থেকেই তা আক্সেস করা সম্ভব?

এবার বুঝলেন তো ক্লাউড কম্পিউটিং কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? আসলে এটা ম্যানেজড, এটা পোর্টেবল, এটা অন-ডিম্যান্ড, এটা পাবলিক/প্রাইভেট!

ম্যানেজড

আপনার পিসিতে কোন ফটো এডিট করতে চাইলে কি করতে হবে? আপনাকে ভালো হার্ডওয়্যার যুক্ত একটি পিসি বিল্ড করতে হবে যেটা ফটো এডিটর সফটওয়্যারকে হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। তারপরে পিসিতে ফটোশপ ইন্সটল করতে হবে, লাইসেন্স কিনতে হবে, তারপরে ফটো এডিট শুরু করতে পারবেন। কিন্তু আপনি fotor.com থেকেও ফটো এডিট করতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার লাগবে না, কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হবে না, কোন লাইসেন্স নিতে হবে না, জাস্ট ব্রাউজার ওপেন করুন আর ফটো এডিট করতে শুরু করে দিন!

হ্যাঁ, এর মানে এটা নয় কোথাও কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করাই নেই, এডিটর সফটওয়্যার ইন্সটল করা রয়েছে আর সেটা চলতে কম্পিউটিং পাওয়ার ও লাগছে কিন্তু সেটা আপনার কম্পিউটারে নয়, fotor.com এর সার্ভার কম্পিউটারে! তো কি বুঝলেন? — ক্লাউড কম্পিউটিং ম্যানেজড সার্ভিস প্রদান করে, আপনাকে কিছুই করতে হবে, জাস্ট কানেক্ট করুন, আর ইউজ করুন।

যখন যতোটুকুর দরকার

ধরুন, আপনি কম্পিউটারে শুধু মিউজিক আর বেসিক ওয়েব ব্রাউজিং করেন, সেক্ষেত্রে ৪জিবি র‍্যাম লাগানো রয়েছে আপনার সিস্টেমে। একদিন হঠাৎ করে একটা ভিডিও এডিট করার দরকার পড়ল, এখন ভিডিও এডিট করতে ৮ জিবি র‍্যাম সিস্টেমে থাকা আবশ্যক, তাহলে কি একটা ভিডিও এডিট করে আবার ৮ জিবি র‍্যাম কিনে লাগাবেন?

ক্লাউডে ব্যাপারটা অনেক সহজ, আপনি সর্বদা কম রিসোর্স ভাড়া নিতে পারেন, এতে কম টাকা লাগবে, আবার যখন দরকার কেবল নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য রিসোর্স বারিয়ে নিতে পারবেন, কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে সেই কাজ করা সম্ভব হবে। আপনার ৮ জিবি র‍্যাম দরকার হলে জাস্ট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া নিলেন, কাজ শেষে আবার পূর্বের কনফিগারে ফেরত আসলেন। কেনোনা ক্লাউড “pay-as-you go” অথবা সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমে কাজ করে।

মানে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যাপারটা আপনার মোবাইলের বিল বা বিদ্যুতের বিলের মতোই। ঠিক যতোটুকু ইউজ করবেন তার জন্য বিল প্রদান করতে হবে। বিদ্যুৎ ইউজ না করলে বিল ও আসবে না, কথা না বললে ফোনের টাকা ও কাটবে না, যতোটুকু কথা ততোটুকু মোবাইল বিল, বুঝতে পারলেন?

প্রাইভেট/পাবলিক কম্পিউটিং

আপনার পিসি আপনার ডেস্কের উপরে বসে রয়েছে, তাই না? আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের উপরে আপনার সম্পূর্ণ কন্ট্রোল রয়েছে, কেউ চাইলেই বাইরে থেকে আপনার কম্পিউটার আক্সেস করতে পারবে না। ঠিক তেমনই, ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রেও প্রাইভেট ও পাবলিক ক্লাউড বলে দুইটি আলাদা আলাদা ফ্লেভার রয়েছে।

আপনি যেকোনো স্থান থেকে আপনার মেইল ইনবক্স আক্সেস করতে পারছেন, বা আর ম্যাসেজ গুলো পড়তে পারছেন। এটা পাবলিক ক্লাউডের মধ্যে পরে। কিন্তু আপনার যদি বিজনেস থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয় চাইবেন না বিজনেসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ক্লাউড সার্ভার গুলোকে বাইরে থেকে কেউ আক্সেস করুক, তাই না? এজন্য রয়েছে প্রাইভেট ক্লাউড।

ক্লাউড প্রভাইডার যেমন- অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, এরা প্রাইভেট ও পাবলিক দুই টাইপের ক্লাউডের সেবাই প্রদান করে থাকে। প্রাইভেট ক্লাউড আলাদা কোন টার্ম নয় এটা পাবলিক ক্লাউড স্টাইলেই কাজ করে, কিন্তু আপনি একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক থেকে বা আপনার নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক থেকেই কেবল সেসকল ক্লাউড আক্সেস করতে পারবেন। অনেক ক্লাউড প্রভাইডারগনেরায় ভার্চুয়াল প্রাইভেট ক্লাউড সেবা প্রদান করে থাকে।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ

ক্লাউডের নানান প্রকার রয়েছে, আর এতখনের আলোচনায় নিশ্চয় সেগুলোকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে, রাইট? টেকনিক্যাল টার্ম থেকে বিবেচনা করতে ক্লাউড আসলে মোট তিন প্রকারের…

  • Infrastructure as a Service (IaaS) : এর মানে হচ্ছে, আপনি সম্পূর্ণ র‍্য কম্পিউটার কিনছেন। আপনার ক্লাউড কম্পিউটারটি সম্পূর্ণই আপনার ডেস্কে বসে থাকা কম্পিউটারটির মতোই। আপনি সেখানে গেম খেলতে পারবেন, সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারবেন, অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারবেন। মানে ঠিক যেভাবে আপনি আপনার ফিজিক্যাল কম্পিউটারটির ক্ষেত্রে করে থাকেন। আপনাকে Pay-As-You-Go হিসেবে বিল নির্ধারণ করা হবে।
  • Software as a Service (SaaS) : এখানে আপনাকে সম্পূর্ণ র‍্য কম্পিউটার সিস্টেমটিকে দিয়ে দেওয়া হয় না, জাস্ট কোন একটা স্পেশাল সফটওয়্যার রান করার পারমিশন দেওয়া হয়। যেমন আপনি যখন জিমেইল ইউজ করেন, জিমেইল সফটওয়্যারটি গুগলের যে সার্ভার কম্পিউটারে ইন্সটল থাকে সেই কম্পিউটারই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে না দিয়ে শুধু জিমেইল অ্যাপটি ইউজ করার পারমিশন দেওয়া হয়।
  • Platform as a Service (PaaS) : ধরুন আপনার ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে সাইটটি অবশ্যই কোন ওয়েব সার্ভারে হোস্ট করা রয়েছে, কিন্তু সাইটের পোস্টে লাইক করার জন্য বা কমেন্ট করার জন্য ফেসবুক এপিআই ইউজ করা হয়েছে, এক্ষেত্রে এটাকে Platform as a Service (PaaS) বলতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের কার্ট, চেকআউট ইত্যাদি জিনিষ গুলো পেমেন্ট মার্চেন্ট সার্ভার থেকে হ্যান্ডেল করা হয়।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

চলুন এবার আলোচনা করা যাক ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো নিয়ে…

সুবিধা

এই প্যারাগ্রাফে প্রথমে সুবিধা গুলো নিয়ে আলোচনা করি চলুন, উপরে যা কিছু নিয়ে এতখন আলোচনা করেছি প্রায় সব গুলোই শুধু ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা গুলোকে আলকপাত করেই। এর সুবিধার কোন শেষ নেই, বিশেষ করে আপনি যদি বিজনেস রান করেন, আপনার অনেক টাকা ও ঝামেলা কমিয়ে দিতে সক্ষম এই ক্লাউড! আপনি হয়তো ছোট বিজনেস রান করেছেন সেক্ষেত্রে হাই এন্ড সিস্টেমের কতিপয় কম্পিউটার অনেক ব্যায়বহুল প্রমাণিত হবে, যেখানে অনেক কম টাকায় ক্লাউড কম্পিউটার ভাড়া নিতে পারবেন, যেগুলোর প্রয়োজন অনুসারে কনফিগ করা যেতে পারে। পার্সোনাল ইউজের জন্যও ক্লাউড কম্পিউটিং ইউজ করতে পারেন, এর এতোবেশি ব্যবহার রয়েছে যেগুলো আমার পক্ষে কল্পনা ও করা সম্ভব নয়।

অসুবিধা

এবার এর অসুবিধা গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক… ওয়েল, এর সবচাইতে বড় অসুবিধাটি হচ্ছে আপনাকে দিনের পর দিন বিল টেনে যেতেই হবে। আপনি একবার টাকা খরচ করে আপনার ফিজিক্যাল কম্পিউটারের সবকিছু আপগ্রেড করলেন, সফটওয়্যার কিনলেন, ব্যাস আপনাকে আর খরচ করতে হবে না। কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটারে বিল প্রদান করতেই থাকতে হবে। যদি বছরের পর বছর ক্লাউড সেবা ইউজ করেন সেক্ষেত্রে লোকাল কম্পিউটার থেকেও অনেক বেশি খরচ লেগে যেতে পারে।

আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটারটি কন্ট্রোল করার জন্য আপনার ফিক্সড ইন্টারনেট কানেকশন দরকার, লিমিটেড ইন্টারনেট ইউজার হলে সমস্যা, ব্রডব্যান্ড ইউজার হওয়া আবশ্যক কেনোনা আপনাকে অনেক ডাটা আপলোড ও ডাউনলোড করতে হতে পারে। তাছাড়া ইন্টারনেট কানেকশন রেস্পন্সিভ ও ফাস্ট হতে হবে। ধরুন আপনি ক্লাউড কম্পিউটারে পাবজি (বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম) ইন্সটল করে খেলছেন, সেক্ষেত্রে আপনার কানেকশনের পিং ভালো না হলে ক্লাউড কম্পিউটার থেকে সময় মতো কম্যান্ড প্রদান করতে পারবেন না।

ক্লাউড কম্পিউটিংকে বিশেষ করে ভাঁড়া নেওয়া ফ্ল্যাটের সাথে তুলনা করতে পারেন, আপনার নিজের কেনা বাড়ি আর ভাঁড়া নেওয়া ফ্ল্যাটের মধ্যের পার্থক্য নিশ্চয় বুঝানোর দরকার নেই তাই না! বেস্ট হয় আপনি বেশি সময় ধরে ইউজ করবেন নাকি কম সময় ধরে তার উপরে বিবেচনা করতে পারেন ক্লাউড ইউজ করবেন নাকি লোকাল কম্পিউটিং!

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভবিষ্যৎ

ক্লাউড কম্পিউটিং এর বদৌলতেই একভাবে মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ১৯৭৩ সালে মোবাইল ফোন আবিস্কার হয়, সে সময়ে মোবাইল ফোন ইউজারের সংখ্যা ছিল খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, মোবাইল ইন্টারনেটে ৬৬% ট্র্যাফিক আসে মোবাইল ডিভাইজ গুলো থেকে। ২০১৪/২০১৫ সালে মোবাইল ট্র্যাফিক ডেক্সটপ ট্র্যাফিককে ছাড়িয়ে যায়, যার ফলে গুগল ২০১৫ সালে মোবাইল ফ্রেন্ডলি অ্যালগোরিদম আপডেট করে। আর বর্তমানে দুনিয়ার প্রত্যেকটি পারসনের চেয়েও মোবাইল ফোনের সংখ্যার পরিমাণ বেশি।

ফোনে ফটো উঠাচ্ছেন সেটা স্বয়ংক্রিয় আপলোড হয়ে যাচ্ছে ক্লাউড স্টোরেজে, যেখান থেকে ফাইল/ফটো হারানোর কোন সঙ্কা নেই। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলেও ক্লাউড সার্ভার থেকে সকল ডাটা যেমন- ফটো/মিউজিক/কন্টাক্ট আবার নতুন ফোনে ফিরে পাওয়া যায়। নতুন একটি টার্ম খুবই দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে, তা হচ্ছে ইন্টারনেট অফ থিংগস — ইন্টারনেটের সাথে যতোবেশি ডিভাইজ গুলো কানেক্টেড হচ্ছে মোবাইল ফোনের ইউজ ততোই বেশি বাড়ছে। যেমন আপনি ইন্টারনেট কানেক্টেড থাকা ঘরের দরজা খুলতে পারবেন মোবাইল ফোনের অ্যাপ ইউজ করে।

উপরের তিনটি প্রকার ছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং এর আরো প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন- পাবলিক ক্লাউড, প্রাইভেট ক্লাউড, হাইব্রিড ক্লাউড, পিয়ার-টু-পিয়ার ক্লাউড, পার্সোনাল ক্লাউড ইত্যাদি! সামনের দিনে আমরা আরো বেশি বেশি ক্লাউড কম্পিউটিং এর উপরে নির্ভরশীল হয়ে উঠবো। যেমন ধরুন সেলফ ড্রাইভিং কার, এর সকল ডাটা, প্রোগ্রাম, সবকিছু ক্লাউডে স্টোর করা যেতে পারে। আধুনিক রোবট গুলোর ব্রেইন ক্লাউডে হোস্ট করা থাকতে পারে।

শুধু রোবট বা মডার্ন ডিভাইজ গুলো কথা বললে ভুল হবে, সামনে আপনার নিজের ব্রেইন ও ক্লাউডে হোস্ট করা থাকতে পারে! কি শুনতে হাস্যকর লাগলো তো? — বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মাইন্ড আপলোডিং প্রযুক্তির উপরে কাজ করছে, এ এমন এক প্রযুক্তি যার মাধ্যমে মানুষের ব্রেইন হুবহু কপি করে কম্পিউটারে সেভ করা যাবে।

আবার গুগল নতুন এক গেমিং প্ল্যাটফর্ম পরিচয় করিয়ে দিয়েছে যার নাম, Stadia — আপনার পিসি বা মোবাইলে কোন গেম ফিজিক্যাল ভাবে ইন্সটল বা প্লে না হয়ে সেটা থাকবে গুগলের শক্তিশালী ক্লাউড কম্পিউটারে, আপনি জাস্ট আপনার ডিভাইজটি কাজে লাগিয়ে গুগলের সেই ক্লাউড নিয়ন্ত্রণ করবেন। মাইক্রোসফট এর নতুন Xcloud প্রজেক্ট ও গুগলের Stadia এর মতোই কাজ করে। মানে কি দাঁড়ালো? হাই এন্ড গেমিং করার জন্য মোটেও আপনার আর লাখ টাকার গেমিং পিসি কিনতে হবে না, জাস্ট একটা সিস্টেম থাকলেই হলো এবং ফাস্ট ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই যেকোনো গেম রান করানো যাবে ক্লাউড এর সাহায্যে!


দেখুন, প্রত্যেকটি প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই বিদ্যমান, এটা নির্ভর করে আপনি কোন কাজে ইউজ করছেন। ক্লাউড কম্পিউটিং নিঃসন্দেহে কম্পিউটিং এবং গেমিং এর ভবিষ্যৎ! — সামনে আরো অগুনতি সম্ভবনা উন্মোচিত হবে এতে কোনই সন্দেহ নেই। আর যখন আজব সব টেকনোলোজি চলে আসবে হাতের নাগালে তখন আবার নতুন করে ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে নতুন স্টাইলে আলোচনা করবো!

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories