কুইক টেক [পর্ব-১১] : আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার হিসেবে ইউজ করুণ!

ওয়েল, ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার বা ওয়াইফাই রিপিটার আপনার কেন প্রয়োজনীয় হবে, আমি জানি না! — হাজারো কারণ থাকতে পারে! হতে পারে আপনার ওয়াইফাই রাউটার আপনার বাড়ি সম্পূর্ণ সিগন্যাল কভারেজ দিতে পারে না। হতে পারে ওয়াইফাই সিগন্যাল আপনার ঘরের দরজা পর্যন্ত আসে কিন্তু পিসির টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায় না, হতে পারে হোটেলে বা কোন পাবলিক ওয়াইফাই প্লেসে কেবল একটি ডিভাইজটি অ্যালাউ করে তখন আলাদা ডিভাইজ গুলো আপনার ফোন থেকেই কানেক্ট করতে চান।

সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনে পোর্টেবল ওয়াইফাই হটস্পট থাকে রাইট? — কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি পোর্টেবল ওয়াইফাই হটস্পট ব্যবহার করে কেবল সিমের ইন্টারনেট ওয়াইফাই দ্বারা শেয়ার করতে পারেন। কিন্তু আপনার ফোনে যদি ওয়াইফাই কানেক্ট করা থাকে সেই ওয়াইফাই ইন্টারনেট পোর্টেবল ওয়াইফাই হটস্পট দ্বারা অন্য ডিভাইজের সাথে শেয়ার করা যায় না।

আজকের কুইক টেক পর্বে দেখাবো, কিভাবে ফোনে কানেক্ট থাকা ওয়াইফাই ইন্টারনেট পোর্টেবল ওয়াইফাই হটস্পট দিয়ে আলাদা ডিভাইজ গুলোর সাথে শেয়ার করবেন। মূলত এরকম করা গেলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার বা ওয়াইফাই রিপিটারের মতো কাজ করবে, তবে আসল ওয়াইফাই রিপিটার ডিভাইজ কিনতে অনেক খরচ রয়েছে, এখানে এটা ফ্রিতেই হয়ে যাচ্ছে।

স্যামসাং এর লেটেস্ট ফোন গুলোতে এই ফিচারটি বিল্ডইন ভাবেই থাকে। হুয়াওয়ের লেটেস্ট ফোন গুলোতেও একই ফিচারটি “Wi-Fi Bridge” নামে দেখতে পাওয়া যায়। যেটা এক ওয়াইফাই থেকে কানেক্ট হয়ে নিজের সম্পূর্ণ নতুন ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করে সিগন্যাল রিপিট করে বা ওয়াইফাই সিগন্যাল এক্সটেন্ড করে।

তবে আজকের দেখানো ট্রিক ইউজ করে অলমোস্ট যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনকেই ওয়াইফাই রিপিটার বানিয়ে ফেলতে পারবেন। কিভাবে? — আরে সেটাই তো বর্ণিত করবো!


অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার এ পরিণত

ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কুইক টেক নাম দিয়ে বহু প্যাঁচাল বিক্রি শেষ! এবার ডাইরেক্ট কাজে ব্যাক, সরাসরি কোন কথা ছাড়া প্লে স্টোরে চলে যান এবং
“NetShare – no-root-tethering” অ্যাপটি ডাউনলোড করে ফেলুন, অথবা অলস ভায়েরা এই লিংক এ ক্লিক করলেও হবে। অ্যাপটির নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে, ফোন রুট থাকা জরুরী নয়।

অ্যাপটি ডাউনলোড শেষ হলে জাস্ট ওপেন করুণ, নিচের মতো ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। “Start WiFi Hotspot” অপশনটিতে মার্ক করে দিলেই কানেক্ট থাকা ওয়াইফাই সিগন্যালটি ফোন রিপিট করতে শুরু করে দেবে।

তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের লিমিটেশনের জন্য আপনি SSID এবং Password এডিট করতে পারবেন না। SSID এর পাশের EDIT অপশন এ ক্লিক করে RESET করতে পারবেন, এতে অ্যান্ড্রয়েড আবার নতুন ক্রেডিনশিয়াল জেনারেট করবে।

এবার আসবে এই এক্সটেন্ডেড নেটওয়ার্কের সাথে নতুন ডিভাইজ কানেক্ট করার পালা। আপনি যদি আরেকটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কানেক্ট করতে চান, সেক্ষেত্রে এই একই অ্যাপ ঐ ফোনটিতেও থাকতে হবে। তারপরে ঐ ফোনে অ্যাপটি ওপেন করুণ এবং “Connect” বাটনটি ট্যাপ করুণ। এক্সটেন্ডার হিসেবে ইউজ করা ফোনটির পাসওয়ার্ড এর পাশে দেখুন WPS বাটন রয়েছে সেখানে প্রেস করে অন করে দিন। এতে করে নতুন অ্যান্ড্রয়েড কানেক্ট করার সময় পাসওয়ার্ড ম্যানুয়ালভাবে প্রবেশ করাতে হবে না।

যাইহোক, কানেক্ট হওয়ার পরে দেখবেন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ভিপিএন রিকোয়েস্ট এনাবল করতে বলবে, এনাবল অ্যাক্সেপ্ট করে দিলেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট আক্সেস পেয়ে যাবে। ব্যাস! তৈরি হয়ে গেলো আপনার ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার!

উইন্ডোজ পিসি কানেক্ট

আপনার উইন্ডোজ পিসিতে ওয়াইফাই অন করুণ এবং অ্যাপের পাসওয়ার্ড ইউজ করে কানেক্ট করুণ। কিন্তু ওয়াইফাই রিপিটার কানেক্ট হওয়ার পরেও দেখবেন পিসিতে কোন ইন্টারনেট কানেকশন নেই, কেননা আপনাকে প্রক্সি সেট করতে হবে।

পিসির Control Panel > Network and Internet এ যান, তারপরে Internet Options থেকে Connections ট্যাবটিতে ক্লিক করুণ। তারপরে LAN Setting অপশনটিতে ক্লিক করুণ।

Proxy Server অপশন থেকে “Use a proxy Server for you LAN” এই অপশনটি টিক মার্ক দিন। এবার অ্যাড্রেস বক্সে 192.168.49.1 ও পোর্ট বক্সে 8282 প্রবেশ করান। সেটিংসটি সেভ করুণ ও ইন্টারনেট ইউজ করার ট্রায় করুণ…

এবার দেখবেন আপনার পিসিতে ইন্টারনেট চলা শুরু হয়ে গেছে, মানে অ্যান্ড্রয়েড রিপিটার পারফেক্ট কাজ করছে! তবে আমি খেয়াল করে দেখেছি অ্যান্ড্রয়েড ওয়াইফাই সিগন্যাল বুস্টার টি ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট হওয়ার পরে কিছু সময় পরপর সিগন্যাল ড্রপ করে, তবে সাথে সাথে আবার কানেক্ট ও হয়ে যায়। আর হ্যাঁ, পুরাতন ডিভাইজ গুলোতে একটু সমস্যা রয়েছে, কোনটাতে আবার সম্পূর্ণ কাজ নাও করতে পারে। নতুন ডিভাইজ গুলো স্মুথলি কাজ করে।


তো ছিল আজকের কুইক টেক সিরিজের ম্যাটেরিয়াল। হ্যাঁ, এখনো একে কুইক টেকই বলবো, কেননা সম্পূর্ণ সিস্টেমটি সেট করা মাত্র ২-৩ মিনিটের ব্যাপার। আর হ্যাঁ, অ্যাপটির পেইড ভার্সন ৭০০ টাকার মতো দামে প্লে স্টোরে পাওয়া যায়, যদি টাকা দিয়ে না কিনতে চান কি করতে হবে জিজ্ঞাস করে আর লজ্জা দেবেন না। প্রো ভার্সনে সকল রেস্ট্রিকশন এড়ানো যাবে।

পোস্টটি থেকে শুধু নিজে উপকারিতা নিলে হবে না, বরং বন্ধুদের সাথে ও শেয়ার করুণ। আসছি পরবর্তী কুইক টেক টিপস নিয়ে, আর হ্যাঁ, সমস্যায় কমেন্ট করুণ!

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories