কেন ওয়্যারলেস চার্জিং টেক নিয়ে আপনার এতো উত্তেজিত হওয়া উচিৎ নয়!

ওয়্যারলেস চার্জিং টেক — প্রযুক্তিটি শুনতেই অনেক হাই টেক মনে হয় তাই না? চার্জিং প্যাড বা চার্জিং স্ট্যান্ডের উপর ফোনটি জাস্ট রেখে দিলেই চার্জ নেওয়া শুরু হয়ে যায়। কোন তারের ভেজাল করার একদমই প্রয়োজন নেই, বিস্তারিত এখানে দেখতে জানতে পারেন এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে।

অবশ্যই ওয়্যারলেস চার্জিং ফিউচার প্রুফ একটি টেক, যদিও লেটেস্ট ফোন গুলোতে এই সুবিধা থাকার পরেও গবেষণা থেকে জানা গেছে কেবল ২৯% ইউজার’রা এটা নিয়মিত ইউজ করে। কিন্তু এই কুল টেক এখনো জনপ্রিয়তা লাভ করেনি?

এই আর্টিকেলে আমি বর্ণনা করেছি “কেন ওয়্যারলেস চার্জিং টেক নিয়ে আপনার এতো উত্তেজিত হওয়া উচিৎ নয়!”


ওয়্যারলেস চার্জিং কিন্তু টেকনিক্যাল ভাবে ওয়্যারলেস নয়!

ওয়্যারলেস চার্জিং টেক উপভোগ করার জন্য আপনার ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে এমন একটি ফোন প্রয়োজনীয় হবে অথবা একটি ফোন কেস প্রয়োজনীয় হবে। সমস্যা হচ্ছে শুধু দামী আর বিশেষ করে ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলোর সাথে এই প্রসাধনী চার্জিং টেক দেখতে পাওয়া যায়।

যদি চার্জিং কেস কিনেন, তাহলেও ওয়্যারলেস চার্জিং উপভোগ করা যাবে, কিন্তু সত্যি বলতে আপনার ফোনে বিল্ডইন ওয়্যারলেস টেক থাকুক আর আপনি কেস ইউজ করেন, — ওয়্যারলেস চার্জিং টেক কখনোই ওয়্যারড চার্জিং এর মতো ফাস্ট হবে না। যদি কেস ইউজ করেন, সেটার চার্জিং স্পিড আরো বেশি স্লো, বা অনেক সময় আপনার ফোনের সাথে কাজ নাও করতে পারে।

ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন ম্যাথড ইউজ করে এক প্লেস থেকে আরেক প্লেসে ওয়্যারলেস ভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করা হয়। ওয়্যারলেস চার্জিং টেক সম্পূর্ণ করতে দুইটি কয়েল কাজ করে, একটি কয়েল চার্জার এ লাগানো থাকে যেটাকে ইন্ডাকশন কয়েল বলে, আরেকটি কয়েল ফোনে লাগানো থাকে যেটাকে রিসিভার কয়েল বলা হয়। এই দুই কয়েল যদি একে অপরের উপর ঠিকঠাক ভাবে না বসে, আপনার ডিভাইজ সঠিকভাবে চার্জ নেবে না।

আর সত্যি কথা বলতে বা টেকনিক্যাল ভাবে ওয়্যারলেস চার্জিং টেক কিন্তু সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস নয়, এখানে ওয়্যারড কানেকশন থাকে। দেওয়াল থেকে চার্জিং প্যাড পর্যন্ত তারের কানেকশন লাগানো থাকে, শুধু আপনার ফোন আর চার্জের মধ্যে তার লাগাতে হয় না।

ওয়্যারলেস চার্জিং অনেক স্লো

আপনি যদি সারারাত ফোনে চার্জে লাগিয়ে সকালে উঠে ইউজ করতে চান সেক্ষেত্রে ওয়্যারলেস চার্জিং ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি ঘনঘন ফোন চার্জ করার আর ইউজ করার দরকার পরে সেক্ষেত্রে মোটেও ওয়্যারলেস টেক উপযুক্ত নয়। ট্র্যাডিশনাল ওয়্যারড চার্জার থেকে ওয়্যারলেস চার্জার গুলো অনেক অনেক অনেক বেশি স্লো।

বর্তমানে অনেক ডিভাইজ ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে, কিন্তু সেগুলো শুধু একই নির্মাতা কোম্পানির ফোন সাপোর্ট করে। সুতরাং Google Qi Charger হয়তো আপনার পিক্সেল ফোন ফাস্ট চার্জ করতে সাহায্য করবে, যেখানে সেই চার্জারে গ্যালাক্সি ফোন ফাস্ট চার্জ হবে না।

আরো এক বিরাট ঝামেলার কথা বলতে তো ভুলেই গেছিলাম, ওয়্যারলেস চার্জারে ফোন চার্জে লাগিয়ে আপনি আরামে ফোনের সাথে কাজ করতে পারবেন না। ফোন তো পরে থাকবে চার্জার প্যাডের সাথে টেবিলে, সেখানে কিভাবে হাতে নিয়ে আরামে ফোন চাপবেন? সামান্য একটু সরে যেতেই ফোন চার্জ হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। ফোন ওয়্যারলেস ভাবে চার্জ করতে করতে আরামে চ্যাটিং করার কথা তো ভুলেই যান, আর আরামে তো চার্জে লাগিয়ে ফোন কল করতেই পারবেন না।

কিন্তু তারের চার্জারের সাথে উপরের না পারা সকল কাজ গুলো অনেক ফুর্তিতেই করতে পারবেন, সাথে যেকোনো ওয়্যারলেস চার্জার থেকেও অনেক বেশি গুনে দ্রুত চার্জ হবে আপনার ফোনটি!

ওয়্যারলেস চার্জিং = বড়লোকি ব্যাপার!

আগেই বলেছি, ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট শুধু বিশেষ করে ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলোতেই দেখতে পাওয়া যায়, আর ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলো মোটেও সস্তার নয়। আপনি হয়তো কয়েক বছরের পুরাতন ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলো একটু কম দামে কিনতে পারবেন, কিন্তু সেগুলোর ওয়্যারলেস চার্জিং আরো স্লো কাজ করবে তাছাড়া সেগুলোর প্রসেসর ও ক্যামেরা গুলো ও এতোদিনে ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে।

ওয়্যারলেস চার্জার গুলোর দাম, আরেকটি বড় সমস্যা। সবচাইতে কম দামের চার্জার গুলো হয়তো ২-৩ হাজারেই পাবেন। কিন্তু দামী গুলো ৫-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

হ্যাঁ, ওয়্যারলেস চার্জিং এর এই মুহূর্তে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে ওয়্যারলেস চার্জিং টেক হঠাৎ করে হারিয়ে যাবে না সেটা নিশ্চিত, তাই এই আর্টিকেলের শিরোনাম দেখে আমাকে ভুল বুঝবেন না। এক রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়নের ও বেশি ডিভাইজ ওয়্যারলেস সাপোর্টেড হবে এবং সেগুলো দুনিয়াতে এক্সিস্ট করবে।

ওয়্যারলেস চার্জিং টেককে আরো উন্নত করতে কোম্পানিরা আরো প্র্যাক্টিকাল ব্যবহার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন যেখানে ফোনের সাথে চার্জিং প্যাড লাগিয়ে রাখার দরকার পরবে না, কিছুটা দূরত্ব থেকেও ফোন চার্জ করা যাবে। মানে যেভাবে ওয়াইফাই টেক কাজ করে আর কি!

Pi, Energous, Ossia — বেশি দূরত্বে ওয়্যারলেস চার্জিং টেক বাজারে আনা নিয়ে কাজ করছে। মানে আপনি রুমের মধ্যে ঢোকার সাথে সাথে ফোন চার্জিং শুরু হবে, যেটাকে ট্রু ওয়্যারলেস চার্জিং বলতে পারবেন, কিন্তু এই কোম্পানি গুলো এখনো তাদের কোন প্রোডাক্ট সামনে নিয়ে আসে নি! এগুলো জাস্ট এখনো কনসেপ্ট ছাড়া কিছুই নয়।

তবে হতে পারে, ভবিষ্যতে আপনি সোফায় বসে ওয়্যারবিডি আর্টিকেল গুলো স্ক্রল করবেন, আর আপনার ফোন ট্রুলি ওয়্যারলেস চার্জিং হতে থাকবে, তবে সেটা কবে টা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না!

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories