মেমোরি কার্ড মেরামত : করাপ্টেড মেমোরি কার্ড কিভাবে ফিক্স করবেন?

যদিও আমার কাছে খুব কমই মেমোরি কার্ড নষ্ট হয়েছে, কিন্তু অনেকেই প্রায়ই এটা অভিযোগ করে তাদের এসডি কার্ড হঠাৎ করে কম্পিউটার বা ফোনে সাপোর্ট করছে না বা কার্ডে কোন ডাটা রাইট করা যাচ্ছে না। ব্যাপারটি সত্যিই অনেক ভয়াবহ হতে পারে যদি এসডি কার্ডে আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা থাকে। আর সেই মুহূর্তে “Unable to read” এরকম এরর ম্যাসেজ শো করলে মাথা ঠিক না থাকারই কথা!

আজকের এসডি কার্ড গুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি স্ট্যাবল, তাছাড়া অনেক কার্ডে তো ওয়ারেন্টি থাকে। অনেক সময় নানান কারণে আপনার কার্ডটি করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে বা ফাইল ড্যামেজ হতে পারে। কিন্তু কিছু স্টেপ অনুসরণ করে সেগুলোকে রিকভার করা সম্ভব। যদি কার্ডটি একেবারেই সিস্টেম ডিটেক্ট না করতে পারে সেটা আলাদা কাহিনী, সেক্ষেত্রে আপনি অনেকটা আউট অফ লাক বলতে পারেন।

যাইহোক, এই আর্টিকেলে আমি নষ্ট মেমোরি কার্ড মেরামত করার কিছু টিপস শেয়ার করেছি, হতে পারে আপনার কাজে আসবে! তো করাপ্টেড মেমোরি কার্ড কিভাবে ফিক্স করবেন? — নিচের স্টেপ গুলো অনুসরণ করুণ!

মেমোরি কার্ড পাচ্ছে না?

দেখুন আপনার কার্ডই যদি ডেড হয়ে যায় সেটা আলাদা ব্যাপার, তাহলে তো সিস্টেম ডিটেক্ট করতে পারবেই না বলুন! কিন্তু সব সময় যে কার্ড ডেড হলেই সিস্টেম ডিটেক্ট করতে পারবে না এরকমটা নয়। অনেক সময় আপনার কার্ড রিডারে প্রবলেম হতে পারে। আর তারো আগে বেস্ট হবে আপনার ফোন বা কম্পিউটারটি একবার রিস্টার্ট দিয়ে নেওয়া। অনেক সময় একটা রিস্টার্টই অনেক সমস্যার সমাধান করে থাকে।

সিস্টেম রিবুট করার পরেও যদি মেমোরি কার্ড না খুঁজে পায়, সেক্ষেত্রে কার্ড রিডার চেক করা বেস্ট হবে। অথবা ফোনে কার্ডটি থাকলে সেটা খুলে আবার লাগাতে পারেন। অনেক সময় কানেক্টরে ময়লা জমে যেতে পারে, আর সেটার জন্য কানেকশন ফেল হতে পারে।

মাইক্রো এসডি কার্ড গুলোতে যদিও লক সিস্টেম নেই, কিন্তু এসডি কার্ড মানে বড় মেমোরি কার্ড গুলোতে লক সিস্টেম থাকে। এই লক হচ্ছে একটি ফিজিক্যাল সুইচ যেটা এনাবল করা থাকলে মেমোরি কার্ড রাইট প্রটেক্টেড হয়ে যায়। মানে আপনি জাস্ট ডাটা রীড করতে পারবেন কিন্তু কিছু রাইট করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে জাস্ট সুইচটি সরিয়ে দিলেই আনলক হয়ে যাবে এবং রীড অনলি মুড আউট হয়ে যাবে।

আর কোনোভাবেই যদি মেমোরি কার্ডটি সিস্টেম ডিটেক্ট না করতে পারে, তাহলে কার্ডটি হতে পারে ডেড হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ, সম্পূর্ণ ডেড ঘোষণা করার পূর্বে অবশ্যই হাজার টাকার চায়না ফোন গুলোতে কার্ডটি উঠিয়ে চেক করতে পারেন। তাছাড়া কার্ডটির ওয়ারেন্টি থাকলে শপের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

মেমোরি কার্ড মেরামত

এখন কথা বলা যাক করাপ্টেড ডাটা নিয়ে। অনেক সময় কার্ড সাপোর্ট তো করে ঠিকই কিন্তু ডাটা গুলো রীড করা বা রাইট করা সম্ভব হয় না। কোন কারণে ডাটা গুলো জাস্ট করাপ্টেড হয়ে যায় কিংবা মেমোরি কার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফরম্যাট করতে বলা হয় সিস্টেম থেকে। এই অবস্থায় মেমোরি কার্ডের সিস্টেম সমস্যা দূর করতে বা করাপ্টেড ডাটা গুলো রিকভার করতে দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস এ ডিফল্ট টুল রয়েছে যার ফলে ডিস্ক স্ক্যান করে কার্ড রিকভার করতে পারবেন এবং দ্বিতীয়ত, তৃতীয়পক্ষ সফটওয়্যার গুলোর সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।

আমি নিচে উইন্ডোজ কম্পিউটার থেকে ডিফল্ট টুল ব্যবহার করে কিভাবে নষ্ট মেমোরি কার্ড ফিক্স করতে পারবেন সেটা দেখালাম, আমার কাছে এই মুহূর্তে ম্যাক নেই তাই সেটা দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। যদি কেউ ম্যাক ইউজার হয়ে থাকেন আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, আমি সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ইন্ডোজ টুল দিয়ে নষ্ট মেমোরি কার্ড ফিক্স

আপনি হয়তো বা উইন্ডোজ ইউজার, কেননা বেশির ভাগ মানুষই উইন্ডোজ ইউজ করে। তবে আপনার জন্য একটি খুশির সংবাদ হচ্ছে উইন্ডোজে ডিফল্ট ভাবে একটি কম্যান্ড লাইন প্রোগ্রাম থাকে (Chkdsk) যেটা মেমোরি কার্ড গুলোর কমন এরর ফিক্স করার জন্য এবং তথ্য রিকভার করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

আপনাকে শুধু আপনার মেমোরি কার্ডটির ড্রাইভ লেটারটি জানতে হবে। জাস্ট উইন্ডোজ ফাইল এক্সপ্লোরার ওপেন করুণ, তারপরে লক্ষ্য করে দেখুন আপনার মেমোরি কার্ডের ক্ষেত্রে কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোন লেটারটি প্রদান করেছে। আপনার সিস্টেমের জন্য উইন্ডোজ (C:) ড্রাইভ লেটার প্রদান করে এবং আলাদা ড্রাইভ পার্টিশন গুলোর আলাদা আলাদা লেটার রয়েছে। জাস্ট আপনাকে আপনার মেমোরি কার্ডটির লেটারটি জানতে হবে।

প্রথমে আপনার লেটেস্ট উইন্ডোজ ১০ কম্পিউটার থেকে স্টার্ট বাটনে রাইট ক্লিক করুণ। একটি মেন্যু আসবে সেখান থেকে “Command Prompt (Admin)” নির্বাচন করুণ। অথবা আপনি সার্চ আইকন ক্লিক করে “cmd” লিখে সার্চ করে সার্চ রেজাল্ট থেকে “Command Prompt” অ্যাপের উপরে রাইট ক্লিক করে “Run as administrator” সিলেক্ট করেও সিএমডি ওপেন করতে পারেন!

কম্যান্ড প্রম্পট ওপেন হওয়ার পরে আপনাকে এই কম্যান্ড লাইনটি প্রবেশ করিয়ে এন্টার হিট করাতে হবে “chkdsk d: /r” — এখানে d: হচ্ছে আপনার মেমোরি কার্ড ড্রাইভ লেটার, আপনার মেমোরি কার্ড ড্রাইভ লেটার অনুসারে আপনাকে কম্যান্ডটি রিপ্লেস করে নিতে হবে। যেমন মনে করুণ আপনার মেমোরি কার্ড ড্রাইভ লেটার h: — সেক্ষেত্রে কম্যান্ডটি হবে “chkdsk h: /r

এবার উইন্ডোজ আপনার মেমোরি কার্ডের কোন এরর ফিক্স করার চেষ্টা করবে এবং ডাটা রিকভার করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া আমি যদি শুধু এরর ফিক্স করতে চান সেক্ষেত্রে “chkdsk d: /f” কম্যান্ডটি প্রবেশ করাতে পারেন। যদি এরর ফিক্স এবং রিকভার দুটোই করতে চান সেক্ষেত্রে /r অপশনটি ইউজ করতে পারেন।

তৃতীয়পক্ষ ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার

বাজারে অগুনতি ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার রয়েছে। তবে আমি বিশেষ করে দুইটি সফটওয়্যারের উপরে খুব বিশ্বাস রাখি। আমার ৯০% সময় এই সফটওয়্যার দুইটি সফলতা বইয়ে এনেছে। প্রথমেই আমি রেকমেন্ড করবো recuva — ডাটা রিকভারি সফটওয়্যারটিকে। এটির ফ্রি এবং প্রো উভয় ভার্সনই রয়েছে। বিশেষ করে এক্সটারনাল ডিস্ক যেমন মেমোরি কার্ড বা পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ কিংবা পেনড্রাইভ রিকভার করার জন্য এটা বেস্ট একটি টুল।

তবে অ্যাডভান্স ফাইল রিকভারি করার জন্য আপনাকে সফটওয়্যারটির প্রো ভার্শন ইউজ করতে হবে। তবে ফ্রি ভার্সনকে কাজে লাগিয়েও আপনি আরামে ফাইল রিকভার করতে পারবেন।

আরেকটি মারাত্মক ভালো টাইপের ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার হচ্ছে, EaseUS Data Recovery সফটওয়্যার। এরা অফিশিয়ালভাবে আমাদের স্পন্সর করেছিল তাদের প্রোডাক্ট টেস্ট এবং রিভিউ করার জন্য, এখান থেকে রিভিউটি চেক করে নিতে পারেন। এদের সফটওয়্যারটি খুবই ভালো কাজ করে, ফ্রিতে উইন্ডোজ, ম্যাক এবং অ্যান্ড্রয়েডের ডাটা রিকভার করা সম্ভব। কিন্তু ফ্রি ভার্সনটিতে কতোটুকু ডাটা রিকভার করতে পারবেন তার লিমিট রয়েছে। আনলিমিটেড ডাটা রিকভার করার জন্য প্রো ভার্সনটি ইউজ করতে হবে।


উপরের সকল স্টেপ গুলো অনুসরন করার পরেও যদি আপনার মেমোরি কার্ড ফিক্স করা সম্ভব না হয় তাহলে হতে পারে আর ডাটা গুলোকে ফেরত পাওয়া যাবে না। তবে প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোর ব্যাকআপ রাখায় হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। যাইহোক, আপনার যেকোনো ইউনিক টাইপের সমস্যা নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারেন, আমি ফিক্স করার চেষ্টা করবো।

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories