বন্ধুরা, শপিং মলে বা কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার সময় নিশ্চয় দেখেন যে, সেখানকার সিকিউরিটি গার্ডদের হাতে এক এমন ডিভাইজ থাকে—যা আপনার কাছে যদি কোন মেটাল যেমন কয়েন বা আপনার বাইকের চাবি থাকে তো বিপ বিপ বিপ আওয়াজ করতে আরম্ভ করে দেয়। হ্যাঁ বন্ধুরা, আমি কথা বলছি মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের মিলিটারি এবং সিকিউরিটি গার্ডরা গোটা পৃথিবী জুড়ে নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে থাকেন। সত্যি বলতে মেটাল ডিটেক্টর গুলো হলো বিজ্ঞান এবং ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজম এর উপর নির্ভরশীল প্রযুক্তি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এরা কীভাবে কাজ করে!
ম্যাগ্নেটিজম ও ইলেক্ট্রিসিটি
বন্ধুরা আজকের এই মেটাল ডিটেক্টর কিন্তু কোন নতুন প্রযুক্তি নয়। আজকের দিনে এটি বিভিন্ন নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহার করা হলেও প্রথমত এটি উদ্ভবন করা হয়েছিলো পুঁতে রাখা গুপ্তধন খোঁজার জন্য। যাই হোক, আমরা এখন খোঁজার চেষ্টা করবো এই প্রযুক্তি কাজ করে কীভাবে তার সম্পর্কে। বন্ধুরা, ইলেক্ট্রিসিটি এবং ম্যাগ্নেটিজম পদার্থ বিজ্ঞানের এমন দুটি বিষয় যা একে অপরের সাথে প্রচণ্ডভাবে সম্পর্ক যুক্ত। মানে বলতে পারেন, এক দেহে দুটি প্রান।
অর্থাৎ যেখানেই ইলেক্ট্রিসিটি থাকবে সেখানেই ম্যাগ্নেটিজম থাকবে এবং যেখানেই ম্যাগ্নেটিজম থাকবে সেখানে ইলেক্ট্রিসিটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। চলুন আরেকটু গভীর থেকে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাক। এখন ভেবে দেখুন আপনার ঘরের যে ইলেক্ট্রিসিটি আছে তা আসছে কোথা হতে? হয়তোবা কোন পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে বা কোন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে কিংবা আপনার ঘরের লাগানো কোন জেনারেটর থেকে। তবে আধুনিক দেশ গুলো পরমানু এবং বাতাসের বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।
যাই হোক, এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোতে ঠিক কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়? যদি বলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা তো সেখানে কোন নদীর মুখে অনেক বড় বাঁধ দেওয়া হয়—এবং বাঁধ দিয়ে নদীর মুখ ছোট করে ফেলার জন্য সেখানে এক বিশাল জলস্রোতের সৃষ্টি হয়। এখন এই জলস্রোতের মুখে রাখা হয় এক বিশাল আকারের টার্বাইন (পাখা ওয়ালা ঘূর্ণায়মান চাকা)। প্রচণ্ড পানির প্রবাহের শক্তির ফলে এই টার্বাইনটি ঘুরতে আরম্ভ করে দেয় এবং এই টার্বাইনটি সাথে লাগানো থাকে একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর—যা ঘূর্ণায়মান শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
ঠিক একইভাবেই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও কাজ করে। বিশাল এক চুলাতে কয়লা জ্বালিয়ে গরম করা হয়ে থাকে প্রচুর পরিমান পানিকে। এখন এই গরম পানি থেকে নির্গত বাষ্প একটি টার্বাইন ঘুরাতে সাহায্য করে আর এই টার্বাইনটি সাথে লাগানো থাকে একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটর—যা ঘূর্ণায়মান শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
তো প্রত্যেক ক্ষেত্রে কিন্তু জেনারেটর চলেই আসছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জেনারেটর কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে? দেখুন জেনারেটর সাধারনত একটি কপারের বড় ড্রাম হয়ে থাকে, মানে এর ভেতরে অনেক বড় কপারের কয়েল থাকে। এই কপার তারের কয়েলের চারিদিকে থাকে চৌম্বকক্ষেত্র—এখন যখন এই কয়েলটি চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যদিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ঘুরতে থাকে তখন জাদুর মতো করে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপন্ন হতে থাকে।
এখন এই উৎপাদিত ইলেক্ট্রিসিটি কাজে লাগিয়ে আমরা বিভিন্ন ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি চালিয়ে থাকি, যেমন ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক ফ্যান, বা ইলেকট্রিক মোটর। দেখুন এই ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি গুলো কিন্তু সম্পূর্ণয় ইলেকট্রিক জেনারেটরের বিপরীত ভাবে কাজ করে থাকে। যখন ইলেক্ট্রিসিটি কোন ইলেকট্রিক মোটরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয় তখন মোটরের ভেতর অবস্থিত কপারের কয়েলে একটি পরিবর্তনশীল ম্যাগনেটিক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় যাকে একটি স্থায়ী চৌম্বকক্ষেত্র সর্বদা বিপরীতদিকে টানতে থাকে, ফলে মোটরটি ঘুরতে আরম্ভ করে।
যাই হোক, এতোক্ষণের আলোচনা হতে আমরা এই বিষয়টি পরিষ্কার হলাম যে, আমরা ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করে ম্যাগ্নেটিজম তৈরি করতে পারি এবং ম্যাগ্নেটিজম থেকে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপন্ন করতে পারি। আর এই তত্ত্ব আমাদের প্রথম দিয়েছিলেন এক স্কটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী—যার নাম মাক্সওয়েল।
মেটাল ডিটেক্টর কীভাবে কাজ করে?
বিভিন্ন মেটাল ডিটেক্টর বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে, কিন্তু এদের প্রত্যেকের কাজ করার একটি কমন বিজ্ঞান রয়েছে। মেটাল ডিটেক্টর গুলোর মধ্যে একটি তারের কয়েল থাকে যা ট্রান্সমিটার কয়েল নামে পরিচিত। যখন এই কয়েলের মধ্যদিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহ করানো হয় তখন এর চারপাশে একটি চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।
এখন যখন আপনি এই মেটাল ডিটেক্টরটিকে কোন মেটাল অবজেক্টের উপর দিয়ে নিয়ে যাবেন তখন মেটাল অবজেক্টির মধ্যে অবস্থিত অ্যাটমের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসবে। মানে মেটাল ডিটেক্টর থেকে আসা চৌম্বকক্ষেত্র মেটাল অবজেক্টির মধ্যে ইলেকট্রনের কক্ষপথ পরিবর্তন করে দেবে। এখন আমরা মাক্সওয়েলের তত্ত্ব থেকে জানি যে, যদি কোন চৌম্বকক্ষেত্র কোন মেটাল অবজেক্টের অ্যাটমে পরিবর্তন নিয়ে আসে তবে সেখানে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপন্ন হয়ে যায়।
অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে, মেটাল ডিটেক্টরটি কোন মেটাল অবজেক্টের মধ্যে সামান্য ইলেক্ট্রিসিটি প্রবেশ করিয়ে দেয়। আবার মাক্সওয়েলের তত্ত্ব বলে যে, কোন ইলেক্ট্রিসিটি যদি কোন মেটালের টুকরার উপর দিয়ে সরানোরা করানো হয় তবে সেখানে ম্যাগ্নেটিজমের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ যখন কোন মেটাল ডিটেক্টরকে কোন মেটাল অবজেক্টের উপর দিয়ে সরানোরা করানো হয় তখন মেটাল ডিটেক্টরের ম্যাগ্নেটিজম মেটাল অবজেক্টির মধ্যে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবেশ করিয়ে দেয় এবং ইলেক্ট্রিসিটি প্রবেশের জন্য সেখানে আরেকটি ম্যাগ্নেটিজমের সৃষ্টি হয়, যা দ্বিতীয় ম্যাগ্নেটিজম।
এখন এই দ্বিতীয় ম্যাগ্নেটিজমকে মেটাল ডিটেক্টর ডিটেক্ট করে নেয়। মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে একটি দ্বিতীয় তারের কয়েল থাকে যাকে রিসিভার কয়েল বলা হয়—এবং এটি একটি সার্কিটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করা থাকে যাতে একটি লাউডস্পীকার থাকে। আমি আগেই বললাম যে মেটাল অবজেক্টটির মধ্যে আরেকটি ম্যাগ্নেটিজমের সৃষ্টি হয় যা ডিটেক্টরে থাকা কয়েল ডিটেক্ট করে এবং সেই কয়েলে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হয়। এখন এই ইলেক্ট্রিসিটি লাউডস্পীকারে চলে যায় এবং বিপ বিপ বিপ শব্দ করতে থাকে। আর এভাবেই কোন মেটাল ডিটেক্টর ম্যাগ্নেটিজম ও ইলেক্ট্রিসিটিকে বারবার কাজে লাগিয়ে কোন মেটাল অবজেক্ট ডিটেক্ট করে।
ব্যবহার
শুধু হারিয়ে যাওয়া কয়েন খুঁজতে নয়, আজকের প্রায় সকল নিরাপত্তা ক্ষেত্রে মেটাল ডিটেক্টরকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে কোন এয়ারপোর্টে, হাঁসপাতালে, শপিং মলে, বিজ্ঞানিক পরীক্ষাগারে ইত্যাদিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কোন ঐতিহাসিক গবেষণা করার জন্য এটিকে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
আরো পড়ুন
- কিউআর কোড, বারকোড কীভাবে কাজ করে?
- গ্রাফিন | GRAPHENE | দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালি ও কঠিন ধাতু
- দ্যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব | WWW | কীভাবে কাজ করে?
শেষ কথা
আশা করছি আজকের পোস্ট হতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জেনেছেন আপনারা। যদিও পোস্টটি অনেক বেশি বড় ছিলনা, তারপরেও আশা করছি মূল ধারণা গুলো দিতে সক্ষম হয়েছি। আজকের লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং নিচে কমেন্টে আমাকে যেকোনো প্রশ্ন বা অনুরোধ বা আপনার মতামত জানাইতে পারেন।
আপনার ক্রিটিক্যাল সায়েন্সের বিষয় গুলোকে এতো সহজ করে বর্ণনা করার ক্ষমতাকে আমার অসাধারন লাগে.. এতোটা সহজ আর বোধগম্য করে কীভাবে প্রত্যেকটি বিষয় তোলে ধরতে পারেন আপনি?
আপনি যেভাবে বর্ণনা করেন সেভাবে তো কোন ফিজিক্স টিচার ও বোঝাতে পারবে না। আপনার প্রত্যেকটি এক্সপ্লেনেসন একদম মগজের মাঝখানে গেথে যায় ভাই.. আর এটাই আপনার বিশাল ট্যালেন্ট ভাই..
এভাবেই এই ছাত্রদের শেখাতে থাকুন…… 😀
সাথেই থাকুন 🙂
অসাধারন হয়েছে ছ্যার 🙂 🙂 🙂 🙂
ধন্যবাদ 🙂
কমেন্ট করার ভাষা নেই ভাই!!!!!!!!!!!!!!!!!!! বাহ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! চমৎকার!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
প্লিজ নিয়মিত ব্লগ লিখুন ভাই। প্লিজ্ এটা আমাদের দাবি।
খুব শীঘ্রই নিয়মিত হয়ে যাব ভাই 🙂
Just woooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooow!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
Kichu bolar bhasha nei. Aapnake teacher kore sob school & college e pathiye deoya uchit tate desh unnoti lav korbe.
🙂
Gsensor callibration কী ভাইয়া!?
একটু বিস্তারিত বলবেন।
callibration করলে কী হয়,সুবিধা কী
Gsensor মূলত আপনার ফোন কীভাবে নড়াচড়া করানো হচ্ছে, কিংবা আপনি ফিজিক্যালি আপনার ফোনকে কীভাবে ধরে রেখেছেন তা ডিটেক্ট করতে সাহায্য করে।
Gsensor callibration করানোর মাধ্যমে Gsensor ঠিকঠাক ভাবে কাজ করানো যায়, এবং আরো দক্ষভাবে কাজ করতে আরম্ভ করে।
আরো জানুন- http://wirebd.com/স্মার্টফোন-সেন্সর/
এর চেয়ে সহজ বাংলাই আর কেউ আলোচনা করতে পারবে না। অসাধারন পোস্ট ভাই
ধন্যবাদ 🙂
অসাধারণ লিখা, থ্যাংকস ভাইয়া
🙂
very nice!…………….
khub valo laglo vai, awesome post, awesome!!!
🙂
এক কথাই অসাধারণ *****
ধন্যবাদ 🙂
কি পোস্ট এটা। সত্যি আসাধারণ
ধন্যবাদ 🙂
ok ok ok
ভাই একটু হেল্প করেন
আমার এক পরিচিত ভাই কালকে গ্যালাক্সি জে৫ Sm-j500f সেটটি একজনের কাছ থেকে কিনেছে। তো সে ফেক্টরি রিসেট দেবার পর frp গুগল একাউন্ট চাচ্ছে যা আগের বআআর ব্যাবক্লহার করা হয়েছিল। যার কাছ থেকে নিয়েছে সে তা ভুলে গেছে। সেটটি মারশ্মেলোও আপগ্রেড করা ছিল। ললিপপে ডাউনগ্রেড করলে তা ঠিক হবে কি? না অন্য উপায় আছে। ভাইটির খুব কষ্টের জমানো টাকা। খুব একটা সচ্ছল না। জানলে তাড়াতাড়ি জানাবেন। ধন্যবাদ।
হ্যাঁ ভাই ফোনটি ললিপপে ডাউনগ্রেড করলে সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে। তারপরেও কোন সমস্যা হলে এই http://gadgetguideonline.com/android/lollipop/how-to-bypass-device-protection-in-android-lollipop-5-1-when-you-do-a-factory-data-reset/ আর্টিকেলটি দেখে নিন।
ধন্যবাদ 🙂
ধন্যবাদ অাপনা তথ্যবহুল পোস্টের জন্য। অাপনার সাথে পোনে অালাপ করতে পারলে অামি একটি বিষয় শেয়ার করতাম। ০১৭৩৮৩২১০০৩