বন্ধুরা, ভেবে দেখুন আপনি গভীর রাতে ভরা বাড়িতে বসে ফুল সাউন্ড দিয়ে টিভি দেখছেন—অথবা আপনার মিউজিক সিস্টেম থেকে ফুল ভলিউমে আপনার পছন্দের মিউজিক শুনছেন। কিন্তু আপনাকে কেউ এসে বলছে না টিভির ভলিউম কম করতে, বা প্রতিবেশীরও কোন সমস্যা হচ্ছে না—কেনোনা আশ্চর্য জনকভাবে আপনি ছাড়া এই শব্দ আর কেউ শুনতেই পাচ্ছে না (ঠিক জেনো হেডফোনের মতো!)। কি? শুনে কৌতুক মনে হচ্ছে তো? কিন্তু সত্যি বলতে এটি ব্যস্তবে সম্ভব। আর এই সম্পূর্ণ আশ্চর্য ঘটনাটি সম্পন্ন করতে পারে এক নতুন প্রকারের লাউড স্পীকার—যা ডিরেকশনাল স্পীকার নামে পরিচিত।
যেকোনো সাধারন স্পীকার বাতাসে পাম্প করে কোন শব্দকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু ডিরেকশনাল স্পীকারস কোন নির্দিষ্ট দিকে টার্গেট করে শব্দ পাঠাতে পারে, যাতে শুধু নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি সেই শব্দ শুনতে পায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্পীকার কাজ করে কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ডিরেকশনাল স্পীকার (Directional Speaker) কি?
একটি প্রচলিত স্পীকারকে প্রশস্ত এলাকা জুড়ে শব্দ ছড়িয়ে দেবার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়ে থাকে—যেখানে একটি স্পীকারের প্ল্যাস্টিক বা কাগজের তৈরি মোচক থাকে যা লাগাতার সামনে পেছনে বাতাস পাম্প করে শব্দ উৎপন্ন করে এবং প্রশস্ত এলাকা জুড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। সাধারন স্পীকার গুলোতে যতোবেশি ইলেকট্রিক কারেন্ট প্রবাহ করানো যাবে ততোবেশি শব্দ এ থেকে উৎপন্ন করানো সম্ভব হবে। বড় কোন উৎসবে দৈত্যাকার স্পীকার গুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যাতে বেশি এলাকা জুড়ে সেই শব্দকে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
বেশিরভাগ সময় আমরা কোন সাধারন স্পীকার থেকে এই কাজ গুলোই আশা করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় কোন স্পীকার দিয়ে যদি কোন নির্দিষ্ট দিকে শব্দ পৌঁছানো যায় তবে সেটি আরো বেশি উপকারী হয়ে উঠতে পারে। মনে করুন, আপনি একটি দৈত্যাকার যুদ্ধ জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন এবং আপনি সমুদ্র যাত্রা করছেন। কিন্তু আপনার সামনে একটি ছোট মাছ ধরার নৌকা চলে আসলো এবং এটি আপনার ঠিক পথের মাঝখানে রয়েছে। আপনি রেডিও দিয়ে সতর্কবার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কোন জবাব আসছে না। এক্ষেত্রে আপনি ডিরেকশনাল স্পীকার ব্যবহার করে সতর্কবার্তা পাঠাতে পারেন। সাধারন স্পীকার দিয়ে কোন শব্দ উৎপন্ন করলে তা চারিদিকে মেলিয়ে যায়, ফলে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারেনা। কিন্তু ডিরেকশনাল স্পীকার একদম নির্দিষ্ট কোন দিকে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে শব্দ ছুড়ে মারতে পারে। আসলে এটিকে শব্দের ফ্ল্যাশ লাইটও বলা যেতে পারে।
ডিরেকশনাল স্পীকার কীভাবে কাজ করে?
কোন সাধারন স্পীকারের তুলনায় ডিরেকশনাল স্পীকার সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। ডিরেকশনাল স্পীকার আর সাধারন স্পীকারের মধ্যেকার সবচাইতে বড় পার্থক্য হলো এটি কোন নড়াচড়া করা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কয়েল এবং কাগজ বা প্ল্যাস্টিকের মচকের মাধ্যমে শব্দ উৎপন্ন করে থাকে না। এটি আলট্রা সাউন্ড উৎপন্ন করে থাকে যা অনেক হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ হয়ে থাকে। সাধারনত এই সাউন্ড মানুষ কখনোই শুনতে পায়না। তাহলে কীভাবে এই স্পীকার গুলো কাজ করে?
দেখুন বন্ধুরা, আমরা সকলেই নবম-দশম শ্রেণীতে শিখেছি যে, মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা হলো ২০ হার্জ থেকে ২০ কিলোহার্জ (২০,০০০ হার্জ) পর্যন্ত। অর্থাৎ আমরা ২০ কিলোহার্জের উপরের কোন শব্দ কখনোই শুনতে পারবো না। যেকোনো সাধারন স্পীকার থেকে ২০ হার্জ থেকে ২০ কিলোহার্জ পর্যন্তই শব্দ উৎপাদিত হয়ে থাকে যা আমরা অনেক আরামে শুনতে পাই। কিন্তু, ডিরেকশনাল স্পীকারে একসাথে অনেকগুলো পিজোইলেকট্রিক ট্র্যান্সডিউসার (piezoelectric transducers) লাগানো থাকে—যা অনেক হাই ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন করে থাকে এবং এই শব্দ তরঙ্গ প্রায় ২ লাখ হার্জ হয়ে থাকে।
এখন এই ২ লাখ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সি কিন্তু আপনার শব্দ শোনার জন্য পাঠানো হয়না। এটি একটি প্রধান ফ্রিকোয়েন্সি, যা নির্দিষ্ট দিকে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে শব্দ পাঠাতে সাহায্য করে। আসলে এই স্পীকারে একসাথে দুটি আলাদা ফ্রিকোয়েন্সির আলট্রা সাউন্ড ট্র্যান্সমিট করানো হয়। একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে নির্দিষ্ট ২০০,০০০ হার্জ সিগন্যাল থাকে—এবং অন্য ফ্রিকোয়েন্সিতে ২০০,২০০ হার্জ থেকে ২২০,০০০ হার্জ সিগন্যাল উঠানামা করে। এখন এই দুইটি ভিন্ন সাউন্ড যদি চলার পথে কোথাও বাঁধা গ্রস্থ হয় (যেমন আপনার কৌতুহলী মাথার সাথে 😛 ) তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই শব্দ তরঙ্গ দুটি একে অপরের সাথে মিশে যায়, এবং একে অপরের থেকে বিয়োগ হয়ে আরেকটি নতুন শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি করে, যা ২০০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ হয়ে থাকে—এবং আপনার কান তা সহজেই শুনতে পায়।
মনে করুন আপনার সামনে একটি ডিরেকশনাল স্পীকার রয়েছে, এবং এথেকে আপনার দিকে একটি ম্যাসেজ ছুড়ে মারা হলো। তবে এতে একসাথে দুই প্রকারের ফ্রিকোয়েন্সির আলট্রা সাউন্ড পাঠানো হবে। প্রথমটি হবে ২০০,০০০ হার্জ (যা রেগুলার আলট্রা সাউন্ড), এবার আরেকটিতে আলট্রা সাউন্ডের সাথে আসল শ্রবণ যোগ্য শব্দটি মিশে পাঠানো হবে, মানে ২০০,২০০ হার্জ থেকে ২২০,০০০ হার্জ এর মধ্যে যেকোনো ফ্রিকোয়েন্সির আলট্রা সাউন্ড। এখন যখন এই ফ্রিকোয়েন্সি গুলো আপনার সাথে ধাক্কা লাগবে, তখন ফ্রিকোয়েন্সি গুলো মিশ্রিত হয়ে একে অপরের থেকে বিয়োগ হয়ে যাবে। এখন মনে করুন আপনার কাছে ১৫,০০০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সি কোন ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছিলো। তাহলে প্রথম তরঙ্গটি হবে ২০০,০০০ হার্জ এবং দ্বিতীয়টি হবে ২১৫,০০০ হার্জ। এখন এদের মধ্যে বিয়োগ করলে উত্তর দাঁড়াবে ১৫,০০০ হার্জ। এখন আপনি আরামে এই সাউন্ড শুনতে পাবেন।
ডিরেকশনাল স্পীকারের ব্যবহার
বন্ধুরা, এই ডিরেকশনাল স্পীকার কিন্তু আজকের আবিষ্কার হওয়া কোন প্রযুক্তি নয়। এটি আমরা অনেক আগেই আবিষ্কার করে ফেলেছি। কিন্তু এখনো এটি সাধারন ভোক্তাদের জন্য লভ্য নয়। তবে হতে পারে সামনের দিনে এটি সাধারন ভোক্তারা ব্যবহার করতে পারবে। ব্যস্তবিকভাবে ভাবতে গেলে এই স্পীকারের ব্যবহার কিন্তু সীমাহীন পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
মনে করে দেখুন তো, যদি বাজারের অ্যাড পোস্টার গুলো শুধু আপনার সাথে কথা বলে, যখন আপনি এর কাছ দিয়ে হেঁটে যাবেন। আবার কোন যাদুঘরের কোন জিনিসের সামনে দিয়ে বা কোন পেন্টিং এর সামনে দিয়ে যখন যাবেন তখন সেগুলো তাদের নিজের কথা বর্ণনা করবে আপনাকে, আরেকটির সামনে গেলে সেটি বর্ণনা করতে আরম্ভ করে দেবে, আর এভাবে চলতেই থাকবে। প্রচণ্ড কোলাহলের মধ্যেও কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট ম্যাসেজ পাঠাতে পারবেন।
ইউএস মিলিটারি ২০০৪ সাল থেকে ডিরেকশনাল স্পীকার ব্যবহার করে আসছে। তাছাড়া নেভিতে, বিভিন্ন যুদ্ধ জাহাজে এবং আরো কিছু বড় বড় খাতে ডিরেকশনাল স্পীকার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হতে পারে সামনের দিনে আপনার টিভিতেও ডিরেকশনাল স্পীকার লাগানো থাকতে পারে, ফলে আপনি ফুল ভলিউমের মজা নিতে পারবেন কাওকে বিন্দু মাত্র বিরক্ত না করেই।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
আরো কিছু পোস্ট
- বিটকয়েন কি? – বিস্তারিত
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
- গ্রাফিন | GRAPHENE | দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালি ও কঠিন পদার্থ
শেষ কথা
তো বন্ধুরা, এই ছিল আজকের টপিক। আশা করছি আপনারা সকলেই বেশ উপভোগ করেছেন। ডিরেকশনাল স্পীকারের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ব্যবহার নিয়ে আপনার মতামত প্রকাশ করতে ভুলবেন না কিন্তু। আশা করছি নিচে চরম আড্ডা জমবে!
KIVABE JE ETO SOHOJ KORE BUGAN!!!!!!!
PURAI MATHA NOSTO VAI!!!!!
BEST BEST BEST!!!!!! EXPLAINED EVER!!!!
ধন্যবাদ অর্ণব ভাই 😀
কি ব্যাপার আজ আপনি বেংলিশ লিখে কমেন্ট করলেন যে 😛
হা হা হা হা 😀 😀 😀 😀 😀 😀 ফোন রিষ্টোর দিয়েছিলাম আর কীবোর্ড ইন্সটল করা ছিল না ভাই তাই 😀 😀
হা হা হা | ব্যাপার না ভাই 😀
ভাই আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না এই স্পিকার আসার পরে বিশেষ করে যে আমার কি উপকার হবে। অসধারন ভাবে আর প্রচণ্ড সহজ করে সম্পূর্ণ টপিকটি বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ 😀
হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই চলে আসবে 🙂
নতুন কোন প্রযুক্তি নিয়ে এত বিস্তারিত জানতে সত্যি অসাধারণ লাগে। আর আপনার লেখা পোস্ট হলে ত কথাই নেই।
😀
Just Wooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooow!!! Bhai ei speaker diye apnaake bhalobasha janalam. Sunte peyechen???????? Ha Ha.
😛
Rich Content bro
থ্যাংকস 🙂
?