অ্যাপস তো আমরা সবাই চিনি এবং প্রত্যেকদিনই ব্যবহার করি। অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
MNML Screen Recorder
নাম শুনেই বুঝতে পেরেছেন যে এটি একটি স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপ্লিকেশান। অ্যান্ড্রয়েডে স্ক্রিন রেকর্ড করার থার্ড পার্টি সল্যুশন বা অ্যাপসগুলোর মধ্যে AZ Screen Recorder সবথেকে জনপ্রিয়। তবে সত্যি কথা বলতে, ইউজার ইন্টারফেসের দিক থেকে এবং ফাংশনালিটির দিক থেকে AZ স্ক্রিন রেকর্ডার এর থেকে অনেক বেটার এই ছোট্ট স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপটি। এই স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস অন্যান্য যেকোনো স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপের থেকে অনেক বেশি মডার্ন, সুন্দর এবং মিনিমাল। গুগলের নতুন ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন গাইডলাইন ব্যাবহার করা হয়েছে এই অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেসে।
এছাড়া এই স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপে এমন কয়েকটি ফিচার পাবেন যেগুলো অনেক থার্ড পার্টি স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপে থাকে না। যেমন- মাইক্রোফোন সাপোর্ট, ৬০ এফপিএস ফ্রেম রেট সাপোর্ট, ডেডিকেটেড কুইক টাইলস শর্টকাট। তবে ভিডিওর ফ্রেমরেট আপনি নিজেই সিলেক্ট করতে পারবেন। আর সবথেকে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে, এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি। আর এখনকার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ট্রেন্ড, ডার্ক মোড অপশনও আছে এই অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেসে। আমার মতে প্লে স্টোরে এভেইলেবল বেস্ট স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপ এটাই।
UnApp
এটি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য অন্যতম একটি আনইন্সটলার অ্যাপ। সাধারনত আমরা উইন্ডোজ পিসি ছাড়া অন্য কোন ডিভাইসে ডেডিকেটেড আনইন্সটলার অ্যাপ/প্রোগ্রাম ব্যাবহার করি না। তবে আনইন্সলার অ্যাপের যে একেবারেই দরকার নেই এমনটা নয়। এই আনইন্সটলার অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনার অ্যান্ড্রয়েড থেকে মাল্টিপল অ্যাপস একবারে সিলেক্ট করে একবারে সবগুলো অ্যাপ আনইন্সটল করতে পারবেন। ফাংশনালিটির তুলনায় টাইম সেভ করার জন্য যথেষ্ট উপযোগী একটি সুবিধা এটি। মাল্টিপল কয়েকটি অ্যাপ একবারে আনইন্সটল করার দরকার হলে সেগুলো অ্যাপ ড্রয়ার থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে আনইন্সটল করা অত্যন্ত বিরক্তিকর।
এটির সাহায্যে আপনি সিলেক্ট করে আনইন্সটল করতে তো পারছেনই, এছাড়া মেসেজ ডিলিট করার মতো অ্যাপের নামের ওপরে রাইট/লেফট সোয়াইপ করেও আনইন্সটল করতে পারবেন। তাছাড়া এর সাহায্যে আপনি প্রত্যেকটি ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাপের সাইজ দেখতে পারবেন, অ্যাপ্লিকেশন আইডি বের করে কপি করতে পারবেন (যদি আপনার দরকার হয় আর কি!)। আর এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
Memoria Gallery
আপনি যদি আমার মতো স্টক অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি অ্যান্ড্রয়েডে একটি ভালো ফাংশনাল ইমেজ গ্যালারী অ্যাপের স্বল্পতা অনুভব করেছেন। থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড স্কিনগুলোতে সবসময়ই ডেডিকেটেড ইমেজ গ্যালারী অ্যাপ দেওয়া থাকে, তবে স্টক অ্যান্ড্রয়েডে থাকে না। স্টক অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে এই গ্যালারী অ্যাপটি ব্যাবহার করতে পারেন। এটি খুব স্পেশাল কোন গ্যালারী অ্যাপ নয়, তবে অন্তত স্টক অ্যান্ড্রয়েডে ফটো গ্যালারী অ্যাপের চাহিদা পুরন করার জন্য যথেষ্ট।
এটির ইউজার ইন্টারফেসও সুন্দর এবং মিনিমাল। Photos, Albums এবং Favourites এই তিনটি ট্যাবে অরগানাইজ করা থাকবে আপনার ফোনের সব ছবি। অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যান্ড্রয়েড স্কিনগুলোর ফটো গ্যালারী অ্যাপের সব ফিচারসই আছে এই অ্যাপে। বিল্ট ইন ফটো ক্রপার, রোটেটর সবকিছুই আছে। এছাড়া যেকোনো ফটোকে নিজের ইচ্ছামত ফেভারিট করে আলাদা ট্যাবে রেখে দেওয়ার সুবিধাও আছে। এই অ্যাপটি Pro ভার্সন পারচেজ করলে আরও অনেক ভালো ফিচারস পাবেন যেমন লং প্রেস করে ইমেজ প্রিভিউ করা, ফটো হাইড করা, সিক্রেট ফোল্ডার তৈরি করা এবং আরও অনেক কিছু! আর এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
AmoledWalls
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি ওয়ালপেপার অ্যাপ এবং এটির সাহায্যে ফোনের ওয়ালপেপার সেট করা যাবে। হ্যা, অন্য সব ওয়ালপেপার অ্যাপের মতোই এটিও একটি ওয়ালপেপার অ্যাপ। তবে এই ওয়ালপেপার অ্যাপটিতে থাকা ওয়ালপেপারগুলো অ্যামোলেড স্ক্রিনগুলোকে ফোকাস করে সাজানো হয়েছে। এইজন্যই এই অ্যাপটির নাম AmoledWalls। আপনার ফোনের স্ক্রিন যদি অ্যামোলেড হয়, তাহলে এই অ্যাপটি আপনার জন্য ওয়ান অফ দ্যা বেস্টস ওয়ালপেপারগুলো প্রোভাইড করতে পারবে।
তবে নন-অ্যামোলেড স্ক্রিনের ডিভাইসগুলোর জন্যও এই অ্যাপটিতে থাকা ওয়ালপেপারগুলো যথেষ্ট ভালো। এই ওয়ালপেপার অ্যাপে বর্তমানে ১৫০০ এরও বেশি ওয়ালপেপার আছে এবং প্রত্যেকদিনই নতুন ওয়ালপেপার যোগ করা হয়। এই অ্যাপে আপনার প্রয়োজনীয় সব ক্যাটেগরির ওয়ালপেপারই পাবেন। মিনিমাল থেকে শুরু করে ম্যাটেরিয়াল সবধরনের ওয়ালপেপারই পাবেন এই অ্যাপে এবং প্রত্যেকটি ওয়ালপেপারই যথেষ্ট শার্প এবং হাই রেজুলেশনের। আর হ্যা, এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
Hyperion Launcher
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে Launcher অ্যাপ কি সেটা আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন ধরনের হোম স্ক্রিন Launcher ব্যাবহার করে আপনি আপনার ফোনের হোম স্ক্রিনকে বিভিন্নভাবে সাজাতে পারবেন এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফিচারও অ্যাড করতে পারবেন আপনার হোম স্ক্রিনে যেগুলো আপনার হোম স্ক্রিন/অ্যাপ ড্রয়ার নেভিগেশনকে আরও সহজ এবং অরগানাইজড করবে। Hyperion Launcher একটি নতুন Launcher যেটি রিলিজের পরপরই অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি অত্যন্ত ফিচার প্যাকড, ফাস্ট এবং মিনিমাল হোম স্ক্রিন লঞ্চার।
পিক্সেল লঞ্চার বেজড লঞ্চার হওয়ায় এটির লুক অ্যান্ড ফিল পিক্সেল লঞ্চারের মতোই। তবে এতে এক্সট্রা অনেক ফিচার আছে যেগুলো আপনি পিক্সেল লঞ্চারে পাবেন না। এই লঞ্চারের ইন্টারফেসের প্রায় প্রত্যেকটি অ্যাসপেক্টই আপনি নিজের ইচ্ছামতো কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। কাস্টম অ্যাকসেন্ট কালার, ব্লার ইফেক্ট, আইকন সাইজ, আইকোন প্যাক, আইকন শেপ, লঞ্চার এনিমেশন সবকিছুই নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। এই লঞ্চারটির সব ফিচারস এবং কাস্টোমাইজেশন ফ্যাসিলিটি লিখে শেষ করা যাবেনা। এছাড়া এই লঞ্চারে একটি ডিফল্ট অ্যাপ লকারও আছে। তবে সেটা ব্যাবহার করার জন্য এবং আরও এক্সট্রা ইউজফুল ফিচারস আনলক করার জন্য আপনাকে এর প্রো ভার্সন পারচেজ করতে হবে।
এই ছিল আরও পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস যেগুলো আপনার কাছে প্রয়োজনীয় হতে পারে। এই সিরিজের আগামী পর্বে আরও পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ শেয়ার করবো। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনও ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আর আপনার জানামতে যদি এমন ভালো আরও কোনও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থাকে, তাহলেও নিচে কমেন্ট সেকশনে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে আমরা ওই অ্যাপটি নিয়েও পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।
/Image Credit: Shutterstock