৫জি সেল টাওয়ার : ৫জি টাওয়ার কিভাবে কাজ করে?

আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি অবশ্যই ৫জি সম্পর্কে শুনেছেন! ৫জি হচ্ছে ৫ম জেনারেশন মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি, যেটা ৪জি টেকনোলোজিকে সম্পূর্ণ রুপে রিপ্লেস করে দিতে সক্ষম। ৫জি অনেক হাইস্পীড ইন্টারনেট কানেকশন প্রদান করবে, আর যেটা প্রদান করার জন্য ৫জি কাজ করবে আরো ছোট ব্যান্ডের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির উপরে। শুধু স্পীডের দিক থেকে নয়, ৫জি প্রযুক্তি ফিচারের দিক থেকে এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেম উভয় দিক থেকেই ৪জি হতে আলাদা।

৫জি সাপোর্ট প্রদান করার জন্য সেল অপারেটর গুলোকে আরো ঘন সেল টাওয়ার ইন্সটল করতে হবে। আপনারা নিশ্চয় জানেন, নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ স্পীড বাড়াতে চাইলে অবশ্যই আগের থেকে আরো ছোট ব্যান্ডের রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রেডিও তরঙ্গ দৌর্ঘ যতো ছোট হয়, স্পীড তো বারে কিন্তু সিগন্যাল রেঞ্জ কমে যায়। এই জন্যই ঠিকঠাক ৫জি সেবা প্রদান করার জন্য ঘনঘন ৫জি সেল টাওয়ার ইন্সটল করার প্রয়োজন পরবে।

তবে আপনি যে সেল টাওয়ার সম্পর্কে এতোদিন জেনে ও দেখে এসেছেন, ৫জি টাওয়ার সেটা থেকে আলাদা। আর এই জন্যই সম্পূর্ণ ব্যাপারটির বেসিক খোলাসা করে এই আর্টিকেলটি পাবলিশ করা।


৫জি টাওয়ার

সেলফোন কিভাবে কাজ করে — এই আর্টিকেলে বেসিক সেল টাওয়ার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো। আমরা বাসার ছাঁদে বা ডেডিকেটেড ভাবে যে বিশাল সেল টাওয়ার গুলো দেখে থাকি এগুলোই সেল নেটওয়ার্কিং এর জন্য ইউজ করা হতো এতোদিন। কিন্তু ৫জির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হবে একটু আলাদা…

২জি, ৩জি, এবং ৪জি টেকনোলোজি সার্ভ করার জন্য দৈত্যাকার সেল টাওয়ার ব্যবহার করা হয়, যেটার নাম “ম্যাক্রো সেলস” বা দীর্ঘ সেল টাওয়ার বলা হয়। ৫জি প্রযুক্তির জন্য, “স্মল সেল” বা ছোট সেল টাওয়ার ব্যবহার করা হবে, কেননা এই সেল টাওয়ার গুলো আকারে অনেক ছোট হবে।

আপনি যদি মোটামুটি উন্নত কোন শহরে বাস করেন, অবশ্যই আপনার পাড়ায় ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করতে আইএসপি গুলো আপনার বাসার সামনের রাস্তায় লাইট পোলের উপরে বা বৈদ্যুতিক পোলের উপরে একটি বাক্সের মধ্যে ওয়াইফাই ট্রান্সমিটার লাগিয়ে রেখে গেছে, রাইট? ৫জি সেল টাওয়ার গুলোও হবে এরকম বাক্সের মধ্যে, যেগুলো ইন্সটল করা থাকবে আপনার বাড়ির রাস্তার পাশের কোন থম্বার সাথে।

যেহেতু ৫জি নেটওয়ার্ক’কে অনেক হাই স্পীডের সাথে ডিল করতে হবে, তাই এর ঘনঘন টাওয়ার থাকাটা জরুরী। আপনি ৫জি আসার পরে হয়তো আপনার তারের ব্রডব্যান্ড কানেকশন বাদ দিয়ে ৫জি ব্রডব্যান্ড ইউজ করতে শুরু করবেন, সেক্ষেত্রে সেল টাওয়ার যদি আপনার বাসার পাশে না হয় আপনি গিগাবিট স্পীড পেতে পারবেন না। তাছাড়া যেহেতু ৫জি প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট অফ থিংস হ্যান্ডেল করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে তাই হাই ব্যান্ডউইথ রেট এবং লো লেটেন্সি অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

৫জি সেল টাওয়ার কিভাবে কাজ করে?

৫জি সেল টাওয়ার সাইজে অনেক ছোট হওয়ার পরেও কিন্তু এদের ক্ষমতা দুর্বল নয়। যেহেতু এদের ঘনঘন ইন্সটল করা হবে, হয়তো রাস্তায় রাস্তায় একের পর এক টাওয়ার ইন্সটল করানো হতে পারে, এর ফলে সহজেই এই নেটওয়ার্কিং সিস্টেম অনেক বেশি ডিভাইজ সাপোর্ট দিতে পারবে এবং হাই ব্যান্ডউইথ কন্ট্রোল করতে পারবে।

৩জি, ৪জি টাওয়ারের ক্ষেত্রে মাত্র একটি টাওয়ার থেকেই হাজারো ডিভাইজ কানেক্টেড থাকতে পারে, ফলে কথা বলতে বা এসএমএস সেন্ড করতে তেমন সমস্যা না হলেও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রেট কিন্তু অনেক স্লো হয়ে যায়। আপনি যদি ব্যাস্ত কোন শহর এলাকায় থাকেন তো অবশ্যই জানেন সকল অপারেটরের ৩জি বা ৪জি ইন্টারনেট স্পীড কতোটা খারাপ। এটার জন্য অনেক অংশেই ৩জি, ৪জি টেকনোলোজিই দায়ী। তবে, কেন আনলিমিটেড মোবাইল ডাটা প্ল্যান নেই? কেন আপনার ৩জি/৪জি স্পীড স্লো? — এই আর্টিকেল থেকে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।

যাই হোক, ৫জির এই ছোট্ট সেল টাওয়ারের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় রেডিও ট্রান্সমিটার যেগুলো অনেক ক্লেভারভাবে কাজ করে। যেহেতু এই সেল টাওয়ার গুলো আকারে অনেক ছোট তাই এগুলো অপারেট করতে অনেক কম পাওয়ার প্রয়োজনীয় হবে। তাছাড়া যখন লোড কমে যাবে টাওয়ার গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়ার ইউজ কমিয়ে দেবে আবার লোড বেড়ে গেলে অটো পাওয়ার অ্যাডজাস্ট করে নেবে।

৫জি টাওয়ার গুলো অত্যন্ত ডিরেকশনাল টাইপের, এই টাওয়ার গুলো নির্দিষ্ট এরিয়ার উপর ফোকাস করে সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করতে পারে। এতে মোটেও সিগন্যাল লস হবে না, যেখানে বেশি সিগন্যাল প্রয়োজনীয় সেখানেই সিগন্যাল সেন্ড করতে পারবে ফলে প্রয়োজনের জায়গায় বেশি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করানো যেতে পারে।

তাছাড়া ৫জি টাওয়ার গুলো আকারে যেহেতু অনেক ছোট এবং একেবারেই সাধারণ ডিজাইনের উপর নির্ভরশীল, তাই মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে একটি নতুন টাওয়ার ইন্সটল করতে। যেখানে ৩জি, ৪জি সেল টাওয়ার ইন্সটল করতে অনেক সময় ব্যয় হতে পারে এবং অনেক বড় পরিমাণে জায়গার দরকার পরে। তবে এই ছোট সেল টাওয়ার গুলো কিন্তু আপনার অপারেটরের বড় ৫জি টাওয়ার গুলোর সাথে কানেক্টেড থাকার প্রয়োজন রয়েছে, অথবা ছোট টাওয়ার গুলোর সাথে ফাইবার অপটিক ক্যাবল লাগানো থাকতে পারে, ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করানোর জন্য।

টাওয়ার লোকেশন

দুনিয়ার পরমাণু পরিমাণ অংশের মধ্যে যতো ডিভাইজ রয়েছে সেগুলোকে ইন্টার-কানেক্ট করানোর জন্য ৫জি প্রযুক্তি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কয়েক বছরের মধ্যে আপনার সেলফোন বা কম্পিউটার নয়, আপনার স্মার্টওয়াচ, কার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সবকিছুই ইন্টারনেট কানেক্টেড হবে। আর নতুন ডিজাইন সংযোজন মানেই আরো অনেক ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার চ্যালেঞ্জ। — তাই সঠিক স্পীড মেইনটেইন করার লক্ষে যতো কম কভারেজ গ্যাপ রাখা যায় ততোই ভালো।

২০২০-২০২২ সালের মধ্যে দুনিয়াই ৫জির যাত্রা খুব ভালোভাবেই শুরু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপারেটর গুলোকে নতুন করে অনেক নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি বিল্ড করতে হবে। ৫জি চালু হওয়ার পরে তাদের ওয়েবসাইটে অবশ্যই কভারেজ ম্যাপ থাকবে। কিন্তু ঠিক কোথায় কোথায় টাওয়ার স্থাপন করবে বা কতো গুলো স্মল টাওয়ার ইন্সটল করবে তার তথ্য নাও থাকতে পারে।

যেহেতু টাওয়ার গুলো অনেক ছোট হবে, তাই সহজেই উঁচু কোন বিল্ডিং এর ছাঁদে, ইলেকট্রিক থামে, লাইট পোলে — ইত্যাদি জায়গায় ইন্সটল করা যেতে পারে। যদিও এই টাওয়ার গুলো দেখতে ট্র্যাডিশনাল সেল টাওয়ারের মতো নয়, কিন্তু আপনার চোখের আশেপাশে অনেক বেশি করে দেখা যেতে পারে। যে শহর গুলোতে অনেক বেশি ট্র্যাফিক সেগুলোতে রাস্তার পাশে অনেক ঘনঘন টাওয়ার ইন্সটল করা থাকতে পারে। যদি অপারেটর গুলো সুপার ফাস্ট স্পীড সরবরাহ করতে চায়, অবশ্যই এদের অনেক বেশি টাওয়ার স্থাপন করতে হবে।


৫জি সম্ভবত আপনার হোম ব্রডব্যান্ড রিপ্লেস করে দেবে। আপনি হয়তো আর ৪জি ও ব্যবহার করবেন না। যদি অপারেটর গুলো ট্র্যু ৫জি প্রদান করে থাকে, হয়তো বা আপনার বাড়ির জানালা থেকেও ৫জি সেল টাওয়ার দেখা যেতে পারে।

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories