স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস নিয়ে সবকিছু!

আইপি অ্যাড্রেসের অনেক ধরণ রয়েছে তা অনেক আর্টিকেলেই ব্যাখ্যা করেছি ইতিমদ্ধে। বিশেষ করে এই আর্টিকেলে আইপি অ্যাড্রেসের অনেক বেসিক ব্যাপার গুলো পরিস্কার করেছি। আজকের আর্টিকেলে বিশেষ করে স্ট্যাটিক আইপি নিয়ে আলোচনা করবো। নতুন ব্রডব্যান্ড সংযোগ বা ইন্টারনেট সার্ভার জনিত টার্ম আসলেই স্ট্যাটিক আইপির আলোচনা চলে আসে। অনেক আইএসপি একে রিয়াল আইপি বলেও চালিয়ে দেয়।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক, স্ট্যাটিক আইপি কি, কেন স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করবেন, এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো — ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা হল!

স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস

স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস অবশ্যই একটি আইপি অ্যাড্রেস, যেটাকে কোন ডিজাইজে ম্যানুয়ালভাবে বসিয়ে সিস্টেম কনফিগার করানো হয়। এর নাম “স্ট্যাটিক” হওয়ার কারণ হচ্ছে, এই পরিবর্তিত হয় না, যেখানে ডাইন্যামিক আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন হয়ে যায়। আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট — সবকিছুতেই স্ট্যাটিক আইপি কনফিগার করা যেতে পারে। তবে বিশেষ করে রাউটারে স্ট্যাটিক আইপি ব্যবহার করে কনফিগার করানো হয়, রাউটারের সাথে কানেক্টেড থাকা ডিভাইজ গুলো রাউটারের লোকাল আইপি ইউজ করে কাজ করে।

স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেসকে অনেক সময় রিয়াল আইপি, ডেডিকেটেড আইপি, বা ফিক্সড আইপি অ্যাড্রেস ও বলা হয়ে থাকে। যাই হোক, নিচের প্যারাগ্রাফ থেকে জানবো, স্ট্যাটিক আইপি কেন ব্যবহার করা উচিৎ সেই সম্পর্কে।

কেন স্ট্যাটিক আইপি ব্যবহার করবেন?

স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেসকে অনেকটা আপনার পার্মানেন্ট ইমেইল অ্যাড্রেস এর মতো বা আপনার বাড়ির ফিজিক্যাল অ্যাড্রেসের সাথে তুলনা করতে পারেন, যেটা অপরিবর্তন হয় না। ফলে এই অ্যাড্রেসের সাথে যোগাযোগ করা খুবই সহজ।

বেশিরভাগ মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর ক্ষেত্রে ডাইন্যামিক আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা হয়। আপনি মোবাইলে ডাটা চালু করলে সাথে সাথে একটি আইপি অ্যাড্রেস পেয়ে যান, কিন্তু ডাটা কানেকশন অফ করে আবার পুনরায় অন করলে আগের পাবলিক আইপিটি আর থাকে না, নতুন একটি আইপি অ্যাড্রেস আপনার ডিভাইজের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়।

কিন্তু স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেসের ক্ষেত্রে আপনি যতবারই লাইন কানেক্ট বা ডিস্কানেক্ট করুণ না কেন, আপনার আইপি কখনোই পরিবর্তন হবে না। সবসময় আইপি একই থাকার বেশ সুবিধা রয়েছে কিন্তু। যেমন আপনি সহজেই আপনার কম্পিউটারে কোন ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারবেন। আপনার নিজস্ব রিমোট ফাইল সার্ভার বানাতে পারবেন। বিভিন্ন পোর্ট ওপেন করার মাধ্যমে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার কানেক্ট করতে পারবেন। যেহেতু আপনার আইপি পরিবর্তন হয় না, তাই কোন পোর্ট কোন ডিভাইজের সাথে যুক্ত করা রয়েছে সিস্টেম তা সবসময়ই জানবে।

ধরুন, আপনার কম্পিউটারে একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়েছে কিন্তু আপনি ডেডিকেটেড আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেন না, সেক্ষেত্রে আপনাকে বিপাকে পড়তে হবে। ওয়েবসাইট আক্সেস করার জন্য ডোমেইন নেম ব্যবহার করা হয়, আর এই ডোমেইন নেমের পেছনে আইপি অ্যাড্রেস থাকে। যদি আইপি পরিবর্তন হয়ে যায় অবশ্যই ডিএনএস পরিবর্তন না করলে আর সাইট আক্সেস করা সম্ভব নয়। স্ট্যাটিক আইপি থাকার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে, কোন কারণে আপনার ডোমেইন কাজ না করলে আপনি ডাইরেক্ট আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সাইট বা যেকোনো সার্ভার আক্সেস করতে পারবেন।

রিমোট ডেক্সটপ অ্যাপলিকেশন যেমন; উইন্ডোজ রিমোট ডেক্সটপে ডেডিকেটেড আইপি ব্যবহার করা অর্থ হচ্ছে আপনি এক আইপি ইউজ করেই বারবার একই কম্পিউটার আক্সেস করতে পারবেন। যদি আইপি বারবার পরিবর্তন হয়ে যায়, আপনাকে বারবার নতুন আইপি প্রবেশ করিয়ে ঐ কম্পিউটার কানেক্ট করতে হবে।

স্ট্যাটিক Vs ডাইন্যামিক আইপি

কোন প্রকারের ভেবাচেকা খাওয়ার দরকার নেই, পরিস্কার করে জানিয়ে রাখছি স্ট্যাটিক আইপি বলুন আর ডাইন্যামিক আইপি — এই দুই জনেই জাস্ট সাধারণ আইপি অ্যাড্রেস, এদের কাজও একই। কিন্তু ডেডিকেটেড আইপি পরিবর্তন হয় না আর ডাইন্যামিক সব সময়ই পরিবর্তন হয়ে যায়।

ডাইন্যামিক আইপি কোন ডিভাইজের সাথে পার্মানেন্ট যুক্ত থাকে না, বরং কিছু সময়ের কোন কোন ডিভাইজের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয় তারপরে আইপি অ্যাড্রেস পুলে ফিরে আসে যাতে নতুন ডিভাইজের সাথে আবার একে যুক্ত করা যেতে পারে। এটাই তো বড় সুবিধা এই ডাইন্যামিক আইপির। যদি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার’রা সকল ইউজারদের ডেডিকেটেড আইপি দিতে থাকেন, সেক্ষেত্রে খুব দ্রুতই আইপি অ্যাড্রেসের সংকট দেখা দেবে, নতুন ইউজারদের আইপি দেওয়ার মত আইপি আর হাতে থাকবে না। যখন কোন ইন্টারনেট ইউজার আর আইপিটি ইউজ করছেন না, ঠিক সেই সময়ে ঐ আইপিটি আরেকটি ইউজারকে দিয়ে দেওয়া হয়।

তবে ডাইন্যামিক আইপি মোটেও ওয়েব সার্ভার, ফাইল সার্ভার, বা এমন কোন সার্ভিস যেখানে আইপি পরিবর্তন হলে কানেকশন তৈরি করতে সমস্যা হবে — সেখানে উপযুক্ত নয়। তবে বেশিরভাগ পাবলিক আইপি প্রভাইডার কোম্পানিরা ডাইন্যামিক আইপিই প্রদান করে থাকে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো ডেডিকেটেড আইপি ব্যবহার করে, যাতে তাদের অ্যাড্রেস পরিবর্তন না হয়।

স্ট্যাটিক আইপির অসুবিধা

ডাইন্যামিক আইপি অ্যাড্রেসের সাথে কোন ঝামেলায় নেই, জাস্ট রাউটারে কানেকশন ঢুকিয়ে দিলেন আর DHCP থেকে স্বয়ংক্রিয় একটি আইপি আপনার ডিভাইজের সাথে লেগে যাবে। স্ট্যাটিক আইপির সাথে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আলাদা। প্রথমত আপনার ডিভাইজ গুলো আপনাকে ম্যানুয়ালভাবে কনফিগ করতে হবে, যেখানে কিছু টেকনিক্যাল নলেজ প্রয়োজনীয়। সাথে ঠিকঠাক কনফিগার না করতে পারলে হোস্ট থাকা ওয়েবসাইট, ফাইল সার্ভার ইত্যাদি কিছুই কাজ করবে না ঠিক মতো।

আরো কিছু সমস্যা রয়েছে স্ট্যাটিক আইপি ব্যবহার করার, তবে সবচাইতে গুরুতর সমস্যাটি হচ্ছে সিকিউরিটি রিলেটেড। যেহেতু আপনার নেটওয়ার্ক আইপি পরিবর্তনই হয় না, ফলে হ্যাকার বারবার একই অ্যাড্রেস ব্যবহার করে আপনার নেটওয়ার্কের উপর হ্যাকিং অ্যাটাক চালিয়ে যেতে পারবে। আপনার নেটওয়ার্ক এবং ডিভাইজের ভালনেরাবিলিটি খুঁজে পাওয়ার জন্য হ্যাকারের কাছে যথেষ্ট সময় চলে আসবে। বা ধরুন আপনার কম্পিউটার অলরেডি হ্যাকার আক্সেস করে নিয়েছে, সেক্ষেত্রে সে আরামে আক্সেস করতেই থাকবে। যেখানে ডাইন্যামিক আইপি বারবার পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে হ্যাকারকে বারবার নতুন করে কানেকশন তৈরি করতে হবে। যাই হোক, অলরেডি কম্পিউটার হ্যাকের শিকার হলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

তাছাড়া স্ট্যাটিক/ডেডিকেটেড/ফিক্সড আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করার জন্য আপনাকে বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে। ওয়েব হোস্টিং এর ক্ষেত্রে সার্ভার বিলের সাথে সাথে অনেক কোম্পানি ডেডিকেটেড আইপির জন্যও বিল গ্রহণ করে থাকে।


ডাইন্যামিক ডিএনএস সার্ভিস ব্যবহার করে আপনি স্ট্যাটিক আইপি ব্যবহার না করেও এর সুবিধা গুলো নিতে পারবেন। এই সার্ভিসটির মাধ্যমে আপনি আপনার নেটওয়ার্কে হোস্টনেম বা ডোমেইন নেম সেট করতে পারবেন যেটা পরিবর্তন হয় না। ডাইন্যামিক ডিএনএস সার্ভিস সর্বদা আপনার হোস্ট নেমের পেছনের আইপি আপডেট করতেই থাকবে ফলে আইপি চেঞ্জ হলেও আপনার সমস্যা হবে না। বলতে পারেন এভাবে নিজের পার্সোনাল ডেডিকেটেড আইপি ব্যবহার করা যেতে পারে, তাও এক্সট্রা টাকা পে  না করেই। আমার মতে No-IP অনেক বেটার সার্ভিস প্রদান করে থাকে।

জাস্ট নো-আইপি ক্লায়েন্ট ইউজ করলেই আপনি সহজেই আপনার কম্পিউটার কনফিগার করে নিতে পারবেন। যদি কনফিগ করতে সমস্যা হয় আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories