২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে নতুন যা যা ঘটতে পারে!

২০১৯ কেবলই শুরু হলো। নতুন বছরের কেবল একটা সপ্তাহই আমরা পার করেছি। গত কয়েক বছরে এমন অনেক অনেক কিছু ঘটেছে যেগুলোর কথা আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম কখনো কল্পনাই করতে পারতো না। ভেবে দেখুন, ১৯৭০ বা ১৯৮০ সালের লোকেরা কি কখনো কল্পনা করতে পেরেছিলো যে আমরা জাস্ট কয়েকটা বাটন প্রেস করেই পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তের লোকের সাথে মুহূর্তের মধ্যে রিয়ালটাইম কনভারসেশন করতে পারবো?

আমি নিশ্চিত, ১৯৭০ সালে আপনি যদি কাউকে বলতেন যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে কি কি ঘটবে, তাহলে সে নিশ্চিত আপনাকে “পাগল” বলতো। যাইহোক, আজকে আলোচনা করতে চলেছি, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে নতুন কি কি ঘটতে পারে এবং নতুন কি কি ইভেন্ট আমরা দেখতে চলেছি (অবশ্য ততদিন আমি/আপনি যদি বেঁচে থাকি আর কি)!

২০২০ :পৃথিবীর নতুন উচ্চতম বিল্ডিং

বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু বিল্ডিংটি হচ্ছে Burj Khalifa, যার উচ্চতা ৮২৮ মিটার এবং যা দুবাইতে অবস্থিত। তবে সবকিছু সঠিকভাবে চললে, ২০২০ সালে Burj Khalifa পৃথিবীর সবথেকে উঁচু বিল্ডিং থাকবে না। ২০২০ সালে পৃথিবীর নতুন উচ্চতম বিল্ডিং Jeddah Tower এর কন্সট্রাকশনের কাজ শেষ হবে, যা Saudi Arabia তে অবস্থিত। আর কাজ শেষ হওয়ার পরে এটাই হবে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু বিল্ডিং, যার উচ্চতা হবে ১০০০ মিটার বা সম্পূর্ণ ১ কিলোমিটার।০ আর স্বাভাবিকভাবেই Burj Khalifa তখন হয়ে যাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম বিল্ডিং।

২০২১ : প্রথম স্পেস হোটেল

Bigelow Aerospace নামক স্পেস রিসার্চ কোম্পানি ২০২১ সালে নতুন একটি স্পেসক্রাফট মহাকাশে লঞ্চ করবে যেটিকে তারা পৃথিবীর প্রথম স্পেস হোটেল নামকরন করেছে। তাদের মতে, এটি একটি ফুল ফিচারড স্পেস হোটেলই হবে যেখানে যে কেউ নির্দিষ্ট পরিমান পার নাইট ফি পে করে স্পেসে এক রাত কাটিয়ে আসতে পারবে। স্পেস হোটেলের মতো এই ধরনের স্পেস প্রোজেক্ট আগেও করা হয়েছে এবং প্ল্যানগুলো সাকসেসফুলও হয়েছে। ISS (International Space Station) এর কর্মীরা এই ধরনের একটি এয়ারক্রাফটকে তাদের স্টোরেজ রুম হিসেবে ইতোমধ্যেই ব্যাবহার করছে।

২০২৪ : মঙ্গলগ্রহে যাবে SpaceX রকেট

SpaceX কোম্পানিটি ২০০২ সালে ইলন মাস্ক তৈরি করেছিলেন এবং SpaceX বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এবং সাকসেসফুল অ্যারোস্পেস রিসার্চার কোম্পানি এবং এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারার। ২০২৪ সালে SpaceX মঙ্গল গ্রহে তাদের একটি নতুন কার্গো এয়ারক্রাফট (রকেট) সেন্ড করবে। তাছাড়া রকেটটি লঞ্চ করার পরে তারা মঙ্গল গ্রহে প্রথম মানুষ পাঠানোরও প্ল্যান করছে।

২০২৫ : পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯ বিলিয়ন

জনসংখ্যা বৃদ্ধি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সবথেকে বড় সমস্যা নয়, এটা সম্পূর্ণ পৃথিবীর সবথেকে বড় সমস্যা। আর এই সমস্যাটি খুব দ্রুত কমে যাওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। জনসংখ্যা শুধুমাত্র বাড়তেই থাকবে, যদিনা যুগান্তকারী কোন সল্যুশন পাওয়া যায় বা কোন ম্যাজিক ঘটে। যাইহোক, United Nations Population Fund (UNPF) এর প্রেডিকশন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা হয়ে দাঁড়াবে ৯ বিলিয়ন। আর ২০৫০ সালে জনসংখ্যা হবে ১০ বিলিয়নেরও বেশি।

২০৩৩ : AURORA স্পেস মিশন

২০৩৩ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি একটি নতুন স্পেস মিশন স্টার্ট করবে যার নাম AURORA। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি সবসময়ই চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ এবং অ্যাস্টেরয়েডগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছে এবং ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর প্রথম ইনিশিয়েটিভ তারাই নিতে চায়। তবে এই মিশনে প্রথমে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর আগে হয়তো তারা একটি স্পেস ক্রাফট এবং অন্য কোন প্রানী পাঠাতে পারে। কারন মঙ্গল গ্রহ বসবাসের জন্য আসলে কতোটা উপযোগী এবং সেখান থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা কতোটা সহজ, সে বিষয়েও তাদেরকে স্টাডি করতে হবে।

২০৩৫ : কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন

না, এখানে কোন রহস্যময় জাদুকরি টেলিপোর্টেশন সম্পর্কে বলা হচ্ছে না, যেখানে কোনকিছুকে না ছুঁয়েই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো হয়। ২০৩৫ সালের দিকে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন টেকনোলজি নিয়ে রিসার্চ করা হবে এবং সেটির ব্যাবহারিক প্রয়োগও করা হবে যার সাহায্যে একটি নতুন রিলায়েবল কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরি করার লক্ষ্যে। এই কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের সাহায্যে ফোটনের পোলারাইজড স্টেটকে স্পেসে পাঠানো হবে। এই সম্পূর্ণ টেকনোলোজিটি সঠিকভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা সম্ভব হলে তা প্রযুক্তি এবং কমিউনিকেশন সিস্টেমে একটি যুগান্তকারী উন্নতি এনে দিতে পারে।

২০৫০ : অসংখ্য সাফল্য এবং বিপর্যয়

১৫ বছর এগিয়ে যেতে হলো, কারন এই ১৫ বছরে কি হবে এবং কি হবে না সেসব একবারেই বলা যায়। উল্লেখযোগ্য সব ইভেন্টগুলোই আস্তে আস্তে সফল হবে এবং আরও নতুন নতুন ইভেন্ট এবং প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করা হবে। তবে ২০৫০ সালের দিকে এবং এরপরে প্রযুক্তির সেক্টরে মানুষের অসামান্য সাফল্যের থেকে বিপর্যয় ঘটবে আরও বেশি।

২০৫০ সাল পর্যন্ত অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের প্রায় ৫০% ই হারিয়ে যাবে। বাড়তে থাকা জনসংখ্যাকে থাকার জায়গা করে দিতে হবে তবে এই সময়ে এসে পৃথিবীতে আর তেমন কোন খালি জায়গাই থাকবে না, যার ফলে কেটে ফেলতে হবে বন-জঙ্গল। তাই এতদিনে অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের প্রায় ৫০% ই জনবসতিতে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭০% ই বসবাস করবে শহর অঞ্চলে। তখন গ্রাম অঞ্চল নামে মাত্র থাকবে এবং গ্রাম অঞ্চলে জনসংখ্যাও হবে খুবই কম।

তবে আরেকটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে পানি বিপর্যয়। ২০৫০ সালের দিকে পরিষ্কার খাওয়ার পানির অভাব দেখা দিতে পারে এবং পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা পরিষ্কার খাওয়ার পানির অভাবে পড়তে পারে। পৃথিবীর মানুষের অ্যাভারেজ লাইফস্প্যান হয়ে দাঁড়াতে পারে ৭৬%।

আর এমন সময়ে এসে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয়ে পড়বে আরো বেশি গুরুতর এবং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের গড় তাপমাত্রা আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। আর পৃথিবীর কয়েকটি দেশ চলে যেতে পারে পানির নিচে।

তবে এসময় মানুষের সাফল্যেরও কমটি থাকবে না। এসময় সেলফ ড্রাইভিং কার হয়ে পড়বে খুবই সাধারন এবং এখনকার তুলনায় অনেক বেশি পরিমান মানুষ সেলফ ড্রাইভিং কার ব্যাবহার করবে। আর এসময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হয়ে পড়বে আগের থেকে হাজার হাজার গুন বেশি স্মার্ট। অনেক রিসার্চার মনে করেন যে, AI ততদিনে এতোটাই স্মার্ট হয়ে যাবে যে, মানুষের রিয়াল লাইফ ফ্রেন্ডের মতো বিহেভ করারও ক্ষমতা রাখবে রোবট।

তাছাড়া স্পেস সাইন্সে যুগান্তকারী উন্নতি করতে পারে মানুষ। হতে পারে এমন সময়েই অথবা ২১০০ সালের আগেই হাজার হাজার মানুষ পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে এবং মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে ভ্রমন করবে এবং সেখানে বসতি গড়ে তুলবে। হতে পারে মানুষ মঙ্গল গ্রহে বাড়িঘর, অফিস, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, হোটেল সবকিছু তৈরি করে ফেলবে। We Never Know!

এগুলোই ঘটবে আজ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, অন্তত যদি সবকিছু ঠিক থাকে। মানুষ টেকনোলজির সেক্টরে যেভাবে প্রতিনিয়ত উন্নতি করেই চলেছে, তাই আগামী ৩০ বছরে এগুলো ঘটবে, এটা খুব কমই বলা হয়। হতে পারে ৩০ বছরের অনেক আগেই আমরা এই সব নতুন কিছু দেখতে পাবো। যদি আজ থেকে ৫০ বছর আগের কথা চিন্তা করেন, তাহলেই ধারনা করা যায় যে মানুষ কতোটা ফাস্ট এবং কতোটা ফাস্ট ফিউচারে হতে পারে!

Image Credit: Shutterstock

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories