একটি কম্পিউটারে যদি আপনি একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চান কিংবা একই অপারেটিং সিস্টেমের ভিন্ন ভার্সন ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনার জন্য দুটি পদ্ধতি খোলা রয়েছে। প্রথমটি হলো ডুয়াল বুট সিস্টেম ব্যবহার করা; এবং দ্বিতীয়টি হলো ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করা। দুটি পদ্ধতিই এই কাজের জন্য বেশ উপযুক্ত কিন্তু এগুলোর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। দুটি পদ্ধতির মধ্যে কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত সেটা নির্ধারণ করতে পারছেন না? তাহলে আজকের পোষ্টটি আপনারই জন্য।
আজকের পোষ্টে আমি আপনার জন্য কিছু প্রশ্ন রাখবো আর আপনি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেই নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত। উল্লেখ্য যে আজকের পোষ্টে ডুয়াল বুট এবং ভাচুর্য়াল মেশিন কাকে বলে কিংবা এদের কে নিয়ে আলোচনা হবে না; আপনার নিজের ব্যবহারের জন্য এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে কোনটি উপযুক্ত সেটাই আজকে আমি সহজ ভাষায় বলতে চেষ্টা করবো। তো চলুন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া যাক।
পিসি সম্পর্কে অ্যাডভান্সড ধারণা রাখেন?
আপনি যদি পিসির এডভান্স ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে ডুয়াল বুট সেটআপ ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ডুয়াল বুট সেটআপ করা এবং প্রয়োজনে সঠিক ভাবে এক্সট্রা OS কে মুছে দেওয়ার জন্য বেশ এডভান্স স্কিলের দরকার হয়। অন্যদিকে ভার্চুয়াল মেশিন চালানোর জন্য আলাদা কোনো স্কিলের দরকার হয় না। কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক ধারণা থাকলে যেকেউই ভার্চুয়াল মেশিন চালাতে পারবেন। ভার্চুয়াল মেশিনে ডিক্স পার্টিশন, বুট লোডার মোড ইত্যাদি টেকনিক্যাল ঝামেলা নেই।
একই সময়ে একাধিক OS ব্যবহার করবেন কি?
মাল্টিটাস্কিং করার জন্য ভার্চুয়াল মেশিন হচ্ছে বেষ্ট। কারণ এখানে জাস্ট Alt + Tab বাটনগুলো চেপেই আপনি ভার্চুয়াল মেশিন থেকে আপনার অপারেটিং সিস্টেমে তড়িৎ (instant) সুইচ করতে পারবেন। তবে ভার্চুয়াল মেশিনে যদি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কাজ করেন তাহলে হয়তো ডুয়াল বুট সেটআপই আপনার জন্য বেস্ট হবে।
ধরুণ আপনার মূল অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে উইন্ডোজ ১০; কিন্তু আপনি একজন প্রোগ্রামার এবং লিনাক্স OS য়ে আপনি কোডিং করতে পছন্দ করেন। আর তাই টানা ৩ ঘন্টা ধরে লিনাক্সে কোডিং করবেন। এক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মেশিনের চাইতে ডুয়াল বুট সেটআপে লিনাক্সের উপর আপনার পিসির পূর্ণ পারফরমেন্স আপনি পেতে পারেন।
আপনি কি হেভি ডিউটি টাস্ক করবেন?
একটি যথেষ্ট শক্তিশালি কম্পিউটারেও ভার্চুয়াল মেশিনে হেভি ডিউটি টাস্ক করতে গিয়ে আপনি সমস্যার সম্মুখিন হতে পারেন। হেভি ডিউটি টাস্ক মানে ভিডিও গেমিং, থ্রিডি এনিমেশন নিয়ে কাজ কিংবা ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।
এর কারণ হচ্ছে ভার্চুয়াল মেশিনটি অনেকটাই একটি ইমুলেটর বা ইমুলেশন মূলক সিস্টেমে কাজ করে থাকে। আর ইমুলেটেড অপারেটিং সিস্টেমে আপনি একটি সাধারণ অপারেটিং সিস্টেমের মতো যথাযথ ভাবে কাজ করতে পারবেন না। তাই আপনি যদি হেভি ডিউটি টাস্ক করার জন্য একই পিসিতে এক্সটা অপারেটিং সিস্টেম দিতে চান তাহলে আপনার ডুয়াল বুট সেটআপ ব্যবহার করাই পারফেক্ট হবে।
আপনার কম্পিউটারে কি SSD রয়েছে?
বর্তমান যুগে পিসিতে HDD (হার্ডডিক্স) এর সাথে SSD (সলিড স্টেট ড্রাইভ) ও ব্যবহার হচ্ছে। আর একটি SSD বেশ ফাস্ট হয়ে থাকে এবং SSD তে পিসি শাট ডাউন এবং রিস্টার্ট বেশ দ্রুতই করা যায়। এটা ডুয়াল বুট সেটআপের জন্য বেশ কাজের। আপনি চোখের পলকে ডুয়াল বুট সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারবেন।
অন্যদিকে একটি HDD বা হার্ডডিক্সে পিসি বন্ধ করে অন্য অপারেটিং সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে বুটআপ করতে ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর কাজ করার সময় এটা বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। কিন্তু আপনার পিসিতে যদি SSD থাকে তাহলে ডুয়াল বুট সিস্টেমে উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে ১/২ মিনিটের মধ্যেই সুইচিং করতে পারবেন।
অপারেটিং সিস্টেম টেস্ট করতে চান?
আপনি ছোটবেলা থেকেই খুব সম্ভবত উইন্ডোজ ব্যবহার করে আসছেন। উইন্ডোজ ব্যবহার করতে করতে একঘেয়েমি লাগছে আপনার। এখন আপনি চাচ্ছেন যে লিনাক্সে সুইচ করতে । এই সিচুয়েশনে ডুয়াল বুট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ডুয়াল বুটে একটি অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা, পরবর্তীতে ভালো না লাগলে সেখান থেকে অপারেটিং সিস্টেম মুছে দেওয়া – এই কাজগুলো বেশ ঝামেলাপূর্ণ। এছাড়াও আপনার হার্ডডিক্সের ডিক্স পার্টিশন এবং সিস্টেমের বুটলোডারের মতো সেন্সিটিভ জিনিসগুলোকেও ডুয়াল বুট সেটআপ ব্যবহার করার সময় টুইকিং করতে হয়।
তাই কোনো অপারেটিং সিস্টেম টেস্ট করার জন্য ডুয়াল বুটের চাইতে ভার্চুয়াল মেশিন আপনার জন্য বেটার চয়েজ হবে।
নিদিষ্ট অ্যাপ চালাবেন নাকি?
ধরুণ আপনি একজন লিনাক্স ইউজার। লিনাক্সে কাজ করতে এবং ব্যবহার করতে আপনি বেশ ভালোবাসেন, উইন্ডোজের থেকে GNOME কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু আপনি একজন ফটোগ্রাফার এবং একজন ক্লায়েন্টের জন্য আপনাকে অ্যাডোব লাইটরুম অ্যাপটিকে ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে ডুয়াল বুটের চাইতে ভার্চুয়াল মেশিন আপনার জন্য বেস্ট সলিউশন হবে। আপনার মূল অপারেটিং সিস্টেমে কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ না থাকলে আপনি শুধুমাত্র সেই অ্যাপ চালানো জন্য ভার্চুয়াল মেশিন সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারেন। নির্দিষ্ট অ্যাপ চালানোর জন্যেই বিশ্বব্যাপী মূলত ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ভাইরাস থেকে এক্সট্রা নিরাপত্তা চান?
ডুয়াল বুটের চাইতে ভার্চুয়াল মেশিনের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি Sandboxed স্ট্যান্ডার্ডে রানিং করে। মানে হচ্ছে ভার্চুয়াল মেশিনের অপারেটিং সিস্টেমের কোনো কিছুই আপনার মূল অপারেটিং সিস্টেমে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলবে না। তাই আপনি যদি সিকুরিটি ক্ষেত্রগুলো টেস্ট করতে চান কিংবা কোনো সাংঘাতিক ওয়েবসাইটের বা কোনো সিকুরিটি স্যুটকে পরীক্ষা করতে চান তাহলে সবসময়ই ভার্চুয়াল মেশিনে করবেন। যাতে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জাস্ট ভার্চুয়াল মেশিনকে রিসেট করে দিয়েই পুনরায় ব্যবহার করা শুরু করতে পারবেন।
অপারেটিং সিস্টেম ক্লোন করতে চান?
ডুয়াল বুট সেটআপ সিস্টেমে আপনি কোনো OS কে ক্লোন করতে পারবেন না। কিন্তু ভার্চুয়াল মেশিনে একটি অপারেটিং সিস্টেমের সম্পূর্ণ এরিয়াকেই মাত্র একটি ফাইলে সংরক্ষণ করতে পারবেন। আর ফাইলটিকে পেনড্রাইভে করে নিয়ে অন্য পিসিতে ভার্চুয়াল মেশিনে কপি পেস্ট করে ব্যবহার করা শুরু করে দিতে পারবেন। মানে ভার্চুয়াল মেশিনে OS খুব সহজেই ক্লোন করে ফেলতে পারবেন। ক্লোন সিস্টেমটি পোর্টেবল ব্যবহার ছাড়াও সিস্টেম ব্যাকআপের জন্য বেশ কার্যকর।
আপনার কি শক্তিশালি পিসি আছে?
সাধারণত আপনার পিসি হার্ডওয়্যারের সকল পারফরমেন্স আপনার পিসিতে ইন্সটলকৃত অপারেটিং সিস্টেমকে চালানোর জন্য বরাদ্দ করে রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু ভাচুর্য়াল মেশিনে অন্য অপারেটিং সিস্টেম চালালে আপনার পিসির হার্ডওয়্যার পারফরমেন্স দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
পুরোনো জেনারেশনের কম্পিউটার এবং ল্যাপটপগুলো বেশি পাওয়ারফুল না হওয়ায় সেখানে ডুয়াল বুটিং অপশন ছাড়া আপনার সামনে আর কোনো অপশন থাকে না। ডুয়াল বুট সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি যখন অপারেটিং সিস্টেম সুইচ করেন তখন আগেরটার মতোই নতুন অপারেটিং সিস্টেমে আপনার সকল হার্ডওয়্যার পারফরমেন্স চলে আসে।
মানে মূল কথা হচ্ছে আপনার পিসি যত বেশি শক্তিশালি হবে, ভাচুর্য়াল মেশিনে OS চালানো তত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যমূলক হবে।
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
স্বাচ্ছন্দ্যমূলক ভাবে একটি ভার্চুয়াল মেশিন চালাতে কতটুকু পাওয়ারের প্রয়োজন হয়? এটা নির্ভর করবে ভার্চুয়াল মেশিনে আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেম চালাবেন। আপনি যদি লিনাক্সের মতো হালকা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তাহলে এক্ষেত্রে সাধারণ পিসিতেই ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ বা ম্যাকওএস এর মতো হেভি অপারেটিং সিস্টেম চালান তাহলে আপনার মর্ডান যুগের পাওয়ারফুল পিসি লাগবে।
একই পিসিতে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন আশা করবো এই পোষ্টটি পড়ে নিলে এ ব্যাপারে আপনি একটি ক্লিয়ার ধারণা পাবেন। দুটি পদ্ধতিরই নিজস্ব আলাদা সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে একাধিক OS চালাতে গেলে ডুয়াল বুট সিস্টেমটিই আমার কাছে বেশি উত্তম বলে মনে হয়। কিন্তু পিসি সম্পর্কে অ্যাডভান্সড ধারণা না থাকলে ডুয়াল বুট সিস্টেম সেটআপ করতে গিয়ে আপনাকে বেশ ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে।
Processor: Intel Pentium CPU @ 2.70 GHz
RAM: 8 GB DDR3 @ 1333 MHz
64 bit Operating System
500 GB HDD
Ei config, Virtual machine use korte parbo toh? VMWare valo naki onno kono software?
Thanks for article
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। র্যাম যত বেশিই থাকুক না কেন আপনার প্রসেসর ভার্চুয়াল মেশিনের চাপ সহ্য করতে পারবে না।
হ্যাঁ, আপনি ভিএম চালাতে পারবেন। র্যাম মিনিম্যাম ৮জিবি লাগবে, যেটা আছে ভালো কথা কিন্তু যেমনটা ফাহাদ ভাই বলেছেন, সে অনুসারে প্রসেসরে বটলনেক করতে পারে! তারপরেও র্যাম বেশি হওয়াতে মোটামুটি ভাবে চলবে!
Joss. I prefer dual boot. Ete full system resources use hoy. Thans.
সেটাই…
Duita SSD te Duita operating system babohar kora jabe? naki operating system er jonno ekta drive e lagbe?
দুটো SSD তে দুটো OS চালাতে পারবেন, তবে সঠিক ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে।
ডুয়াল বুটই সর্বোত্তম।ঝামেলাটা বাধে, যখন নতুন ওএস আনন্সটল করে দেওয়া হয়!