ইনকগনিটো মোড আসলে কতোটা সিকিওর?

ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড বা সিক্রেট মোডের সাথে আমরা সবাই খুব ভালোভাবেই পরিচিত। এখনকার মডার্ন সব ডেক্সটপ ব্রাউজার এবং স্মার্টফোন ব্রাউজারেই ইনকগনিটো মোড থাকে। আমরা যখন ইন্টারনেটে খুবই পার্সোনাল কোন উদ্দেশ্যে কোন ওয়েবপেইজ বা ওয়েবসাইট ভিজিট করি বা এমন কোন সেন্সিটিভ বিষয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করি যেটা আমরা চাই না যে আমরা ছাড়া অন্য কোন দ্বিতীয় ব্যাক্তি সেটা দেখতে পাক, তখন আমরা ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড বা ইনকগনিটো ট্যাব ওপেন করি এবং সেখানে আমাদের সব প্রাইভেট ব্রাউজিং এর কাজ শেষ করি এবং কাজ শেষে ইনকগনিটো উইন্ডোটি বা ট্যাবটি ক্লোজ করে দিই আর নিশ্চিত থাকি যে, আমরা কি ব্রাউজ করলাম সেটা আমরা নিজেরা ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু সেটা কতোটা সত্যি? আজকে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা যাক।


 

ইনকগনিটো মোড কিভাবে কাজ করে?

আপনি যখন আপনার ব্রাউজারের ইনকগনিটো উইন্ডো বা ট্যাব ওপেন করেন, তখন আপনার ব্রাউজার একটি নতুন ব্রাউজিং সেশন তৈরি করে যেখানে ব্রাউজারে আগে থেকে সেভ করা কোন ব্রাউজিং ক্যাশ, হিস্টোরি বা কোন কুকিজ আলাদা করে রাখা হয়। আর এই নতুন সেশনে আপনি যা যা ব্রাউজ করেন, তা থেকে জেনারেট হওয়া ক্যাশ এবং কুকিজ টেম্পোরারিভাবে এই নতুন ব্রাউজিং সেশনে সেভ করা হয়। আপনি যেই মুহূর্তে ইনকগনিটো মোড বা ইনকগনিটো ট্যাবটি ক্লোজ করে দেন, তখনই এই নতুন ব্রাউজিং সেশনটি শেষ হয়ে যায় এবং এই সেশনে জেনারেট হওয়া সমস্ত ক্যাশ,কুকিজ এবং হিস্টোরি সবকিছু ডিলিট করে দেওয়া হয়, যাতে এরপর অন্য কেউ এই ব্রাউজারটি ব্যাবহার করলে তার কাছে ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করা কন্টেন্টগুলোর কোন ডাটার কোনরকম ট্রেস না থাকে।

তাই ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড অনেকক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। যেমন- আপনি যখন আপনার ভিজিট করা কোন একটি ওয়েবসাইটে আপনার সেকেন্ডারি অ্যাকাউন্টের সাহায্যে লগিন করতে চান, তখন ইনকগনিটো মোড ব্যাবহার করে একই ওয়েবসাইটে আলাদা অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করতে পারেন। যেহেতু এখানে আপনার মেইন ব্রাউজারের কোন ডাটা ব্যাবহার করা হচ্ছে না, তাই এখানে আপনার কোন ওয়েবসাইটে লগিন থাকা অ্যাকাউন্টটিও থাকছে না। তাছাড়া আপনি যখন চাইছেন যে অ্যাডভারটাইজাররা আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট ট্র্যাক করে আপনাকে অ্যাড টারগেটিং না করুক, তখনও আপনি ইনকগনিটো মোড ব্যাবহার করতে পারেন। কারন, ইনকগনিটো মোড আপনার মেইন ব্রাউজারের কোন ব্রাউজিং ডাটা অ্যাক্সেস করতে পারছে না, যার ফলে অ্যাডভারটাইজাররাও আপনার ব্রাউজার ক্যাশ এবং আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট জানতে পারছে না এবং আপনার কাছে অ্যাড টারগেট করতে পারছে না।

আপনি ইনকগনিটো মোডে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় হয়তো খেয়াল করেছেন যে ইনকগনিটো ব্রাউজিং সেশন শুরু করার আগেই প্রায় সব ব্রাউজারে একটি ওয়ার্নিং মেসেজ দেওয়া হয় যে, যদিও ইনকগনিটো মোড আপনার মেইন ব্রাউজিং সেশনের কোন ক্যাশ বা  কোন কুকিজ বা কোন ডাটা অ্যাক্সেস করে না, তবে আপনার আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস  প্রোভাইডার), বা আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার, আপনার এমপ্লয়ার নেটওয়ার্ক অ্যাডমিন এবং আপনি ইনকগনিটো মোডে যে ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন সেই ওয়েবসাইটটির সার্ভার চাইলেই আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবে। অর্থাৎ ইনকগনিটো মোড ব্যাবহার করলেও আপনার অ্যাক্টিভিটি এদের কাছ থেকে হিডেন থাকবে না। আপনি যদি এতদিন ভেবে থাকেন যে ইনকগনিটো মোডে আপনি কি ব্রাউজ করছেন তা সবার কাছ থেকে হিডেন থাকবে, তাহলে আপনি অনেক বড় ভুল ভেবেছেন।

কিন্তু কিভাবে?

এর কারন হচ্ছে, ইনকগনিটো মোড শুধুমাত্র সেই সকল ব্রাউজিং ডাটাগুলো ট্র্যাক না করার নিশ্চয়তা দেয়, যেগুলো আপনার ডিভাইসে লোকালি স্টোর হচ্ছে। অর্থাৎ কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট সম্পর্কে যেসব ডাটা আপনার নিজের ডিভাইসে স্টোর হচ্ছে, ইনকগনিটো মোড শুধুমাত্র সেই ডাটাগুলোকে ট্র্যাক না করার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।

কিন্তু ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করার সময়ও আপনি আপনার ভিজিট করা ওয়েবসাইটগুলোর সার্ভারের কাছে যে রিকুয়েস্ট সেন্ড করছেন বা সার্ভার থেকে যেসব রিকুয়েস্ট রিসিভ করছেন এই সমস্ত ট্র্যাফিক কিন্তু রাউট হচ্ছে আপনার আইএসপি কিংবা আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের  সার্ভার থেকেই। আপনি সাধারনভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করলে আপনার রিকুয়েস্টগুলো সার্ভারের কাছে যেভাবে যেত, ইনকগনিটো মোড ব্যাবহার করলেও আপনার রিকুয়েস্টগুলো সার্ভারের কাছে এক্স্যাক্টলি সেভাবেই যাচ্ছে। ইনকগনিটো মোড বা সিক্রেট মোড ব্যাবহারের ফলে এখানে এক্সট্রা কোন ধরনের এনক্রিপশন বা এক্সট্রা কোন সিকিউরিটি যোগ হচ্ছে না (https বাদে)।

তাই আপনি ইনকগনিটো মোড বা সিক্রেট মোড যেটাই ব্যাবহার করেন না কেন, আপনার ব্রাউজিং ডাটা, আপনি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন, আপনার ইন্টারনেট অ্যাকটিভিটি খুব সহজেই ট্রেস করা সম্ভব। এখানে আপনার লাভ এইটুকুই হবে যে, আপনার পিসিটি অন্য আর যারা ব্যাবহার করে, তারা এসব ট্রেস করতে পারবে না। তাই ১০০% প্রাইভেসি পেতে চাইলে ইনকগনিটো মোডের পাশাপাশি একটি ভালো ভিপিএন সার্ভিস ব্যাবহার করা উচিৎ।

তাছাড়া, আপনি হয়তো জানেন না যে, প্রাইভেট ব্রাউজিং সেশন শেষ হয়ে গেলে আপনার ইনকগনিটো মোডের সকল ডাটা ব্রাউজার ১০০% নিরাপদভাবে ডিলিট করে না। ভালো একটি ডাটা রিকভারি টুল ব্যাবহার করে সহজেই এসব ডিলিটেড ব্রাউজিং ডাটা আবার রিকভার করা সম্ভব। তাছাড়া আপনার মেইন ব্রাউজারের কোনকিছুই যে আপনার ইনকগনিটো ব্রাউজিং সেশনকে কোনভাবেই অ্যাফেক্ট করতে পারবে না, সেটাও সম্পূর্ণ সত্যি নয়। ওয়েবসাইটের যেসব ফিচারস ইনকগনিটো মোডে কাজ করতে পারে, যেমন অ্যালাউ করা ব্রাউজার এক্সটেনশনস, অ্যাডোব ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ইত্যাদি টুলস আপনার ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করা ডাটা অ্যাক্সেস করতে পারে এবং ট্রেস করার ক্ষমতা রাখে। তাই সবসময় খেয়াল রাখবেন যে আপনি ইনকগনিটো মোডে কি কি ব্রাউজার এক্সটেনশন এবং ফিচারস এনাবল করে রেখেছেন। যদি প্রাইভেসি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত হন, তাহলে অপ্রয়োজনীয় সব ফিচারস এবং এক্সটেনশন ইনকগনিটো মোডে ডিজেবল করে দিন।

তাছাড়া, আপনি ইনকগনিটো মোডে কি কি ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন, তার কিছু ডাটা (বিশেষ করে ওয়েবসাইটগুলোর আইপি অ্যাড্রেস) আপনার পিসির ডিএনএস ক্যাশেও স্টোর হয়ে যায় যেগুলো ব্রাউজার অটোমেটিক ডিলিট করেনা। তাই আপনি যদি সত্যিকারেই প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে ইনকগনিটো ব্রাউজিং সেশন শেষ করার পরে পিসির কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে ipconfig/flushdns কমান্ড অ্যাপ্লাই করে আপনার ডিএনএস রেকর্ডগুলো মুছে ফেলা একটি ভালো সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এটাও মনে রাখা ভালো যে, আপনার পিসিটি যদি ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেই ম্যালওয়্যারটি বিভিন্ন ধরনের স্পায়িং টুলস বা কি-লগার টুল ব্যাবহার করে সহজেই আপনার ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করা ডাটা চুরি করতে পারে।


 

এই ছিলো ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোডের বিশ্বস্ততার সম্পর্কে কিছু তথ্য। আমি বলছি না যে, ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড কোন কাজের নয়। অবশ্যই এটা কার্যকর। তবে যদি আপনি অনলাইন প্রাইভেসি নিয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে হন, তাহলে ইনকগনিটো ব্রাউজিং এর ওপরে ভরসা করে বসে থাকবেন না। ইনকগনিটো ব্রাউজিং এর সাথে ভিপিএন ব্যাবহার করবেন এবং ওপরে যা যা বলেছি সেগুলোর ব্যাপারেও খেয়াল রাখবেন। Happy Browsing!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories