MNP: মোবাইল নাম্বার না বদলে অপারেটর পাল্টে ফেলার বিস্তারিত কাহিনী!

M

মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি বিশ্বব্যাপি অনেক জনপ্রিয় একটি মোবাইল ফোন অপারেটর পরিবর্তন করার একটি প্রক্রিয়া। MNP (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহক বর্তমান মোবাইল অপারেটর থেকে অন্য মোবাইল অপারেটরে MSISDN-(মোবাইল স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার ডিরেক্টরি নাম্বার) অর্থাৎ মোবাইল নাম্বার একই রেখে পরিবর্তিত হতে পারে । বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ সহ ৭২টি দেশে এই এমএনপি সেবা প্রচলিত রয়েছে।

ধরুন আপনার মোবাইল নাম্বার ০১৭********** এর মানে আমদের দেশের অপারেটর এর হিসেবে এটি হল একটি গ্রামীণফোন সংযোগ। একইভাবে ধরলাম ০১৮********** হল রবি সংযোগ। তবে কেমন হত যদি আপনার মোবাইল নাম্বার ০১৭********** তবে সংযোগটি রবি? বা বাংলালিংক? হ্যা বন্ধুরা  মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি সার্ভিসটি এমনই। এখানে আপনি আপনার মোবাইল নাম্বারটি অপরিবর্তিত রেখে আপনার মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। বিশ্বের বহু দেশে এই সেবাটি ইতিপূর্বে চালু হয়ে থাকলেও আমাদের দেশে এই সেবা শুরু হল ১ অক্টোবর থেকে।


এমএনপি ব্যবহার করে যেকোনো অপারেটর থেকে অন্য যেকোনো অপারেটরে আপনি সার্ভিস ট্র্যান্সফার করতে পারবেন।

এমএনপি যেভাবে কাজ করে

ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং এর অপর ভিত্তি করে ‘এমএনপি তথা মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি ‘ প্রধানত তিনটি পোর্টেবিলিটি সার্ভিস প্রদান করে থাকে।

সার্ভিস প্রোভাইডার পোর্টেবিলিটি: এখানে ব্যবহারকারীর মোবাইল নাম্বার একই থাকে , তবে শুধু তাদের মোবাইল নাম্বার প্রদানকারী তথা ডোনার অপারেটর সার্ভিস পরিবর্তন হয়ে যায়।

লোকেশন পোর্টেবিলিটি: ব্যবহারকারী যে স্থানেই অবস্থান করুক না কেন ; ডোনার মোবাইল নাম্বারটির সাথে পরিবর্তিত সার্ভিস প্রোভাইডার এর নমনীয়তা রক্ষা করা এই লোকেশন পোর্ট্যাবিলিটি এর কাজ।

সার্ভিস পোর্টেবিলিটি: GSM থেকে CDMA বা CDMA থেকে GSM এমন সার্ভিস এর মধ্যকার পরিবর্তনও এই এমএনপি তথা মোবাইল নাম্বার পোর্ট্যাবিলিটিতে সম্ভব। আর এর ভেতর নমনীয়তা রক্ষা করা সার্ভিস পোর্ট্যাবিলিটি এর কাজ।

এই সার্ভিস প্রোভাইডার,লোকেশন এবং সার্ভিস পোর্টেবিলিটি মিলে পুরো এমএনপি তথা মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি।এমএনপি সেবাকে কার্যকর করতে সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটি সেন্ট্রালাইজড অথবা ডি-সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ এর প্রয়োজন হয় ,

সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজঃ এখানে সকল সার্ভিস প্রোভাইডার মিলে সকল সংযোগ এর এক্সেস একটি সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ থেকে তত্তাবধনা করেন।

ডি-সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজঃ এখানে একেকটি সার্ভিস প্রোভাইডার আলাদাভাবে নিজেদের পোর্টেবিলিটি এক্সেস পরিচালনা করে।

এমএনপি’কে আরও সহজ করে বোঝার জন্য নিচের টার্মগুলো সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে আরও ভালো হয়ঃ

ডোনার আপনি আসলে বর্তমানে যে সার্ভিস প্রোভাইডার টির নাম্বার ব্যবহার করছেন এবং আপনার সার্ভিস যার থেকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন সে হল আপনার ডোনার।
রিসিপিয়েন্ট ডোনার এর থেকে যার সার্ভিসে আপনি সুইচ করছেন সে হল আপনার রিসিপিয়েন্ট প্রোভাইডার।
পোর্টেবিলিটি ডাটাবেজ সকল কার্যকলাপ এবং ডোনার এর সাথে রিসিপিয়েন্ট এর নমনীয়তা রক্ষা করে একটি সেন্ট্রালাইজড অথবা অনেকগুলো ডি-সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ।
রুট নাম্বার আপনার এমএনপি রুটিং এর জন্য তৈরি হয় একটি ইউনিক রুট নাম্বার যেটি আপনার ডোনার থেকে রিসিপিয়েন্ট এর মধ্যে সকল প্রকার পোর্টিং এর ক্ষেত্রে কাজে লাগে।

যেকোনো অপারেটর থেকে যেকোনো অপারেটরে যাওয়া যাবে

ভুমিকা থেকেই তো ধারনা পেলেন, আপনি এই এমএনপি ব্যবহার করে যেকোনো অপারেটর থেকে অন্য যেকোনো অপারেটরে আপনি সার্ভিস ট্র্যান্সফার করতে পারবেন। ধরুন আপনি X অপারেটরটির সার্ভিস থেকে বেশি সন্তুষ্ট Y অপেরাটর থেকে । তবে আপনার ফোন নাম্বারটি এক্স অপারেটর এর আর এটি আপনার নানাবিধ কাজে অনেকের কাছে বেশি পরিচিত বলে বাধ্য হয়ে আপনাকে সেই X অপারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে এমএনপি এর মাধ্যমে আপনাকে আর সেই কষ্ট করতে হবে না। আপনি চাইলেই আপনার একই মোবাইল নাম্বার রেখে কেবল আলাদা আলাদা অপারেটরে চলে গিয়ে তাদের সার্ভিস অনায়সেই ব্যবহার করতে পারবেন! মোবাইল অপেরেটর নাম্বার একই রেখে সার্ভিস অপারেটর পরিবর্তন করার পেছনে অনেক কারন থাকতে পারেঃ

#১ ধরুন আপনার বাসায় আগে X অপারেটর ব্যবহার করতেন এবং সেখানে আপনার কানেকটিভিটি অনেক ভালো ছিল+ তবে কোন কারনে স্থান পরিবর্তন করলেন যেখানে এক্স অপারেটর এর কানেকটিভিটি, সিংনাল স্ট্রেন্থ খুবই খারাপ। তবে Z অপারেটর এর কানেকটিভিটি, সিংনাল স্ট্রেন্থ খুবই ভালো – তখন আপনি মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি ব্যবহার করে X অপারেটর থেকে Z অপারেটরে সুইচ করতে পারেন।

#২ আপনি নিয়মিত মোবাইলে ডাটা প্যাক ব্যবহার করেন তথা, আপনি একজন মোবাইল ডাটা ইউজার। এক্ষেত্রে আপনার সর্বদা চোখ থাকে কোন অপারেটর বেশি অফার দেয়, তবে আপনি সিম নাম্বার পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি হতে পারে অন্যতম সেরা পছন্দ।

এমএনপি এর প্রক্রিয়া এবং চার্জ

যেকোনো নেটওয়ার্কে এমএনপি করতে ব্যবহারকারীকে সেই নেটওয়ার্ক বা সার্ভিস প্রোভাইডার এর সিম রিপ্লেসমেন্ট পয়েন্ট বা সার্ভিস সেন্টারে যেতে হবে। সিম রিপ্লেসমেন্ট পয়েন্ট বা সার্ভিস সেন্টারে MSISDN-(মোবাইল নাম্বার), NID নাম্বার, জন্মতারিখ, নাম ও ঠিকানা দেয়ার করার পর সাবস্ক্রিপশন শর্তাবলী গ্রহণ করে বায়োমেট্রিক ভ্যারিফিকেশন অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রসেস সম্পন্ন হলে গ্রাহক তার ব্যবহারকৃত বর্তমান অপারেটরের সিম-এ এমএনপি সার্ভিস কনফার্মেশনের SMS পাবেন। এই ধাপগুলো সম্পন্ন হলে গ্রাহককে রিটেইলারের কাছ থেকে বা উক্ত পয়েন্ট থেকে নতুন রিসিপিয়েন্ট প্রোভাইডার সিম সংগ্রহ করতে হবে। এরপর বর্তমান অপারেটর সিম-এ এমএনপি কনফার্মেশনের SMS পেলে সবশেষে বর্তমান অপারেটর সিম কার্ড বন্ধ হয়ে যাবে এবং নতুন রিসিপিয়েন্ট প্রোভাইডার সিমটি চালু হবে।

৭২ ঘণ্টার ভেতর এই এমএনপি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গ্রাহকদের ৫০ + ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হবে তবে অপারেটর ভেদে আরও ১০০ টাকা বা তারও বেশি কিছু সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে কিনা তা অপারেটর ভেদে নির্ভর করছে। তবে একবার পরিবর্তন এর ৯০ দিনের ভেতর আর কোন এমএনপি করা যাবেনা। আর একবার পোর্টিং তথা পরিবর্তন হয়ে গেলে উক্ত নাম্বারে ব্যালান্স , টক টাইম, ইন্টারনেট আর প্রযোজ্য হবে না।

যে কারনে এমএনপি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিঘ্ন ঘটতে পারে…

নাম্বারটি বর্তমানে কোনো আইনগত কারনে বিচারাধীন থাকলে। নতুন সংযোগ চালু হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পোর্টিং রিকোয়েস্ট করলে।মোবাইল নাম্বারের মালিকানা পরিবর্তনের অনুরোধ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে। বর্তমান মোবাইল ফোন অপারেটরে বকেয়া বিল থাকলে। আদালতের আইন দ্বারা মোবাইল নাম্বারটির পোর্টিং নিষিদ্ধ থাকলে ইত্যাদি কারনে এমএনপি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

সর্বপ্রথম সিঙ্গাপুর ১৯৯৭ সালে পুরো পৃথিবীকে মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর পৃথিবীর প্রায় ৭১ টি দেশ এই প্রযুক্তিকে তথা সেবাকে নিজ নিজ দেশে প্রতিষ্ঠিত করে। আর এবার বাংলাদেশ ৭২ তম দেশ হিসেবে এই মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি তথা এমএনপি সেবাকে উন্মুক্তও করল।


Image Credit: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories